জমির বিভিন্ন রকমের রেকর্ড যেমন এস.এ ((S.A), সি.এস (C.S), বি. আর. এস (B.R.S) এর নকল/ পর্চা/ খতিয়ান/ সার্টিফাইড কপি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ড রুমে সংরক্ষিত থাকে। জনগন যদি নিজের জায়গা/জমি বিক্রয় করতে চায় কিংবা কেউ যদি জায়গা/জমি কিনতে চায় তাহলে এখন অনেক সহজেই তা করতে পারেন। কিছুদিন আগেও এটা এতটা সহজ ছিল না। প্রায়ই সময় ক্রেতা/বিক্রেতাদের প্রতারণার শিকার হতে হয়েছে। এখন যে কেউ ইন্টারনেটে আবেদন করে জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুমে থেকে জায়গা/জমি সংক্রান্ত যেকোন রেকর্ড সংগ্রহ করতে পারেন। এতে করে জনগনের কষ্ট লাঘব হচ্ছে, সময় কম লাগছে এবং সবচেয়ে বড় কথা রেকর্ডগুলো ডিজিটালাইজড হয়ে যাচ্ছে। ভূমি মন্ত্রনালয়, জেলা প্রশাসন ও এটুআই-এর অধীনে ৬৪ টি জেলার রেকর্ড রুমের সকল রেকর্ড ডিজিটালাইজড হবে। বর্তমানে ডিজিটালাইজড খতিয়ান রেকর্ডের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি।

কীভাবে তুলবেন জমির খতিয়ানঃ

জেলা ই-সেবা কেন্দ্র, জেলা ওয়েব পোর্টাল এবং ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র থেকে জমির খতিয়ান তোলা বা জমির খতিয়ান তোলার জন্য আবেদন করা যায়।

জেলা ই-সেবা কেন্দ্রঃ

দেশের ৬৪ টি জেলায় ই-সেবা সার্ভিস চালু আছে। সকল জেলর এই সমস্ত ই-সেবা কেন্দ্র থেকে সাধারন জনগন ওয়ান স্টপ সেবা নিয়ে উপকৃত হচ্ছে।

ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রঃ

সারা দেশে প্রত্যেক টি ইউনিয়ন পরিষদে একটি করে ইউআইসি (ইউনিয়ন ইনফরমেশন সেন্টার) আছে। জনগন সুবিধামত বা নিকটবর্তী ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থিত থেকে ইন্টারনেটে আবেদন করতে পারেন। এই পরিসেবা পেতে হলে ভোক্তাকে অবশ্যই সরকার নির্ধারিত কোর্ট ফি এবং জেলা প্রশাসন হতে নির্ধারিত প্রসেসিং ফি বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হবে।

জেলা ওয়েব পোর্টালঃ
বর্তমানে প্রত্যেক জেলার একটি করে নির্দিষ্ট জেলা ওয়েব পোর্টাল আছে। ঐ জেলা ওয়েব পোর্টালের ঠিকানা জানা থাকলে ঘরে বসে খতিয়ান তোলার জন্য আবেদন করা যায়। জেলা ওয়েব পোর্টাল টি পেতে হলে এই ঠিকানায় Districtname ঢুকতে হবে। সংশ্লিষ্ট জেলা ওয়েব পোর্টাল ওপেন করলে একটি আবেদন ফর্ম পাওয়া যায়। জমির খতিয়ান দেখতে হলে আবেদন বক্সে ক্লিক করতে হবে, তাহলে খতিয়ান ফর্ম পাওয়া যাবে।

আবেদনের প্রকারভেদঃ
জমির খতিয়ান তোলার জন্য সাধারণতঃ দুই ভাবে আবেদন করা যেতে পারে।
(১) সাধারণ ডেলিভারি এবং
(২) জরুরী ডেলিভারি

সাধারণতঃ সাধারণ ডেলিভারির মাধ্যমে ০৭ থেকে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে খতিয়ান হাতে পাওয়ার কথা।
জরুরী ডেলিভারীর ক্ষেত্রে তিন (০৩) কার্য দিবসের মধ্যে খতিয়ান হাতে পাওয়ার যায়। তবে ছুটির দিন কিংবা অনিবার্য কারণ বশতঃ উভয় ক্ষেত্রে দুই এক দিন দেরি হতে পারে।
* যদি কেউ খতিয়ানটি ডাক যোগে পেতে চান তাহলে তাকে আবেদন ফরমের নির্দিষ্ট কলাম পূরণ করতে হয়।
* জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট ই-সেবা কেন্দ্র থেকে আবেদন পত্রের সাথে নির্ধরিত কোর্ট ফি কিনে আবেদন পত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হয়।
* আবেদন পত্রটি ভালভাবে যাচাই বাছাই করে জেলা ই-সেবা কেন্দ্রে জমা দিতে হয়।
* তবে আবেদন পত্রের সাথে নির্ধারিত কোর্ট ফি সংযুক্ত করে ডাক যোগে জেলা ই-সেবা কেন্দ্রে পাঠানো যেতে পারে।

কোথায় পাওয়া যাবে কোর্ট ফিঃ
বিভিন্ন জায়গায় কোর্ট ফি পাওয়া যেতে পারে। তবে জেলা ই-সেবা কেন্দ্র, স্ট্যাম্প ভেন্ডর অথবা অনুমোদিত ইউ.আই.এস.সি. উদ্দোক্তাগনের কাছ থেকেও নিশ্চিন্তে কোর্ট ফি ক্রয় করা যেতে পারে।

শেষের কাজঃ
* আবেদন পত্রের নির্দিষ্ট বক্সে মোবাইল নম্বর দিতে হবে। যার মাধ্যমে আবেদন পত্রের বর্তমান অবস্থা জানা যাবে।
* আবেদন পত্রটি যথাযথভাবে পূরণ করে প্রিন্ট করে নির্দিষ্ট স্থানে কোর্ট ফি লাগিয়ে নিজ হাতে অথবা ডাক যোগে জেলা ই-সেবা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে হবে।
* আবেদন টি প্রাপ্তির পর জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুমের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কয়েকটি ধাপে কাজটি সম্পাদন করতে হয়।
* প্রথমে অফিস সহকারী আবেদন পত্রগুলো যাচাই বাছাই করেন। আবেদন পত্রগুলো উপজেলা/মৌজা অনুযায়ী ভাগ করে রাখেন। এরপর মৌজার বই সংগ্রহ করেন। বই থেকে আবেদনকৃত খতিয়ানের তথ্য এন্ট্রি করানো হয়। এরপর যাচাই বাছাই করে তুলনাকারীর কাছে পৌঁছে যায়। তুলনাকারী রেকর্ড চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সহকারি কমিশনারের কাছে নিয়ে যান। চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই আবেদনকারীর কাছে খতিয়ান হস্তান্তর করা হয়।

আশার কথা আবেদনকারীকে কোর্ট ফি প্রদান করার জন্য এখন আর ঝামেলা পোহাতে হয় না। খুব শীঘ্র অনলাইনে কোর্ট ফি প্রদান করা যাবে। তখন বিষয় টি আরও সহজতর হবে। খতিয়ান নিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি ও দুর্নীতির দিন প্রায় শেষের পথে।
Link