যানবাহন চালানোর জন্য একজন চালকের কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে অনেক সময় দক্ষ ড্রাইভারকেও বিপদে পরতে হয়; এটা আইনত একটি অপরাধও বটে। ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির প্রক্রিয়া খুব একটা সহজ না হলেও টা করে ফেলা আবশ্যক। এটি কোথা থেকে এবং কীভাবে পাওয়া যায়, কিংবা এটা তৈরির সঠিক প্রক্রিয়াটাই বা কী- এটা অনেকেরই অজানা; একারণে অনেক সময় প্রতারণার শিকারও হতে হয়। এই লেখাটি তাদের জন্য।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রকারভেদঃ

১) শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স

২) অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স

৩) পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স

৪) পি. এস. ভি. ড্রাইভিং লাইসেন্স

৫) ইনস্ট্রাকটর ড্রাইভিং লাইসেন্স।

পাঁচ প্রকার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মধ্যে শিক্ষানবিশ, অপেশাদার এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স সর্বাধিক প্রচলিত। নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

যে সকল ব্যক্তি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে অযোগ্যঃ

. চঞ্চল প্রকৃতির ব্যক্তি,

.  স্নায়বিক রোগী,

. হৃদরোগী,

. রাতকানা,

. বর্নান্ধ ,

. শ্রবন প্রতিবন্ধী এবং

.  শারীরীক অক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি।

যারা ড্রাইভিং লাইসেন্সএর জন্য আবেদন করতে পারবেনঃ

. নূন্যতম ১৮ বছর বয়সী ব্যক্তি শিক্ষানবিশ অথবা অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

.  নূন্যতম ২০ বছর বয়সী ব্যক্তি পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

. কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাশ হতে হবে।

শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির পদ্ধতিঃ

শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির জন্য এক জন ব্যক্তিকে নিম্নলিখিত প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবেঃ-

* বাৎলাদেশ রোর্ড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি  (BRTA) অফিসকতৃক ছাপানো ফর্মটি সংগ্রহ করতে হবে।

* ফর্মটি যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে।

ফর্মটিতে প্রয়োজনীয় সংযুক্তিঃ

* রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কতৃক প্রদত্ত ফিটনেস সার্টফিকেট। উল্লেখ্য ফর্মে রক্তের গ্রূপ উল্লিখিত থাকবে।

* সদ্য তোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি ও তিন কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি।

* জাতীয় পরিচয় পত্র/ জন্ম সনদ পত্র/ পাসপোর্টের সত্যায়িত অনুলিপি।

* BRTA কতৃক নির্ধারিত ব্যাংকে (ব্যাংকের নাম  www.brta.gov.bd  ঠিকানায় পাওয়া যাবে) ফি জমার রশিদ।

* পূরণকৃত ফর্মটি প্রয়োজনীয় কাগজাদিসহ BRTA অফিসে জমা দিতে হবে।

এরপর আবেদনকরীকে BRTA কতৃক নির্ধারিত তিনটি পরীক্ষায় (লিখিত, মৌখিক এবং ব্যবহারিক বা ফিল্ড টেষ্ট) অংশগ্রহণ করতে হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্নদের পুনরায় আরেকটি নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করতে হয়। পূরণকৃত ফর্মটি, নির্ধারিত ফি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অফিসে প্রেরণ করতে হয় স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য।  এরপর ইলেক্ট্রিক মেশিনের সাহায্যে গ্রাহকের ডিজিটাল ছবি, স্বাক্ষর, আঙুলের ছাপ নেওয়া। সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর স্মার্ট কার্ড গ্রহণের তারিখ গ্রাহককে SMS-এ জানানো হয়।

স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সএর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ

* সঠিকভাবে পূরণকৃত নির্ধারিত আবেদনপত্র।

* রেজিষ্টার্ড ডাক্তার প্রদত্ত ফিটনেস সার্টফিকেট।

* সদ্য তোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।

* জাতীয় পরিচয় পত্র/ জন্ম সনদ পত্র/ পাসপোর্টের সত্যায়িত অনুলিপি।

* পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন।

* BRTA নির্ধারিত ব্যাংকে ফি জমাদানের রশিদ।

পরীক্ষা পদ্ধতিঃ

তিনটি ধাপে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। প্রথমে লিখিত, তারপর মৌখিক এবং শেষে ব্যবহারিক বা ফিল্ড টেষ্ট। লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকরীকে অবশ্যই রোড সাইন, ট্রাফিক সিগনাল, ট্রাফিক সাইন, ট্রাফিক নিয়মাবলী, মটর যান এবং ইঞ্জিন সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকতে হবে। ২৫-৩০ নম্বরের পরীক্ষায় ৬৬% নম্বর পেলে তাকে উত্তীর্ন ধরা হয়। উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে বাস্তবিক জ্ঞান মৌখিক পরীক্ষর মাধ্যমে যাচাই বাছাই করা হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ব্যবহারিক অংশ। এক্ষেত্রে, প্রার্থীকে তিনটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। যিগয্যাগ টেষ্ট, জাম্প টেষ্ট এবং রোড টেষ্ট। এই সব পরীক্ষায় উত্তীর্নদের  ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য মনোনীত করা হয়।

অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির নিয়মঃ

প্রথমে গ্রাহককে নির্ধরিত ফি পরিশোধ করতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র BRTA-এর সার্কেল অফিসে জমা দিয়ে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। কাগজপত্র সঠিক পেলে একই দিনে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স গ্রহণ করা হয়। সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর স্মার্ট কার্ড গ্রহনের তারিখ গ্রাহককে SMS-এ জানানো হয়।

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির নিয়মঃ

গ্রাহককে একটি অতিরিক্ত ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। একমাত্র এই পরীক্ষায় উত্তীর্নরাই  নির্ধরিত ফি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র BRTA-এর সার্কেল অফিসে জমা দিয়ে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স -এর জন্য আবেদন করতে পারে। কাগজ পত্র সঠিক পেলে একই দিনে গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স গ্রহণ করা হয়। সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর স্মার্ট কার্ড গ্রহনের তারিখ গ্রাহককে SMS-এ জানানো হয়।
Link1 | Link2