পদ্মার পূর্ব পারে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও গৌরবময় ইতিহাস সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ একাডেমী -বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী।উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ এ পুলিশ একাডেমী মূলত পুলিশ বাহিনী কে প্রশিক্ষণ প্রদান করার পাশাপাশি উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে পুলিশ বাহিনী কে আধুনিকীকরণ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায়, প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করার জন্যে বিশেষ প্রশিক্ষণ ও প্রদান করে আসছে।সারদার এ অঞ্চল একসময় ছিল ডাচ বণিকদের ব্যবসার জমজমাট স্থান। ১৯১০ সালে ব্রিটিশ সরকার ২৫০০০ টাকার বিনিময় এ তাদের কাছ থেকে পুরো জায়গা কিনে নেয় পুলিশ একাডেমী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং সার্বিক দায়িত্ত দেয়া হয় এইচ চিমনি কে।
অবস্থান:
রাজশাহী শহর থেকে ৩২ কিঃমি দূরে সারদা-য় অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি।ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত এ প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী একাডেমী ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।মোট ১৪৩ একর জমির উপর অবস্থিত বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ একাডেমী।সারদহ এর বড়কুঠি অফিসারদের মেস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং ছোটকুঠি ব্যবহৃত হচ্ছে প্রিন্সিপাল এর বাসভবন হিসেবে।
ইতিহাস ও পরিচিতি:
তৎকালীন সময়ে রাজশাহী অঞ্চল তথা পুরো উত্তরবঙ্গের মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বানানো হয় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী। গৌরবময় এ প্রতিষ্টান টি তার সৃষ্টিলগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে মানুষের সেবায়। বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীর প্রধাণ লক্ষ্য হলো নতুন যোগদানকারী পুলিশ সদস্যদের কে প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে চৌকস করে গড়ে তোলা। সারদার গৌরব হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী ১৯১২ সালে মেজর এইচ চিমনি-র হাতে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের পূর্বে ভারত, পাকিস্তান, আসাম রাজ্য এমনকি সুদুর ব্রিটেন থেকেও পুলিশ কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ নিতে আসতেন। পরবর্তীতে দেশ বিভাগের পর যা বন্ধ হয়ে যায়। ঐতিহ্যময় গৌরবময় এ প্রতিষ্ঠানের নীতিবাক্য “শান্তি শৃঙ্খলা নিরাপত্তা প্রগতি” সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কতৃক নিয়ন্ত্রিত।
আবাসিক ব্যবস্থা:
বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী তে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য রয়েছে পৃথক আবাসিক ব্যবস্থা যা কিনা পদমর্যাদা এর ভিত্তিতে ভিন্ন করা হয়েছে। এস পি, এ এস পি, এস আই, এ এস আই, কনস্টবল, নারী পুলিশ সবার জন্যে পৃথক পৃথক বাসস্থান এর সুব্যবস্থা ।
লক্ষ্য:
বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী এর প্রধাণ লক্ষ্য ই হচ্ছে পুলিশ অফিসারস দের প্রশিক্ষণ দেয়া।প্রশিক্ষণ প্রদানের এ ব্যাপারটি কিছু বিষয় মাথায় রেখে প্রদান করা হয়। মূলত ৩ টি শ্রেণীতে বিভক্ত করে এ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। শারীরিক শক্তিতে বলিয়ান, মানসিক শক্তিতে অটুট এবং নৈতিকতায় দৃঢ়তা আনা ই হলো বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীর প্রশিক্ষণ এর প্রধাণ লক্ষ্য।
এ প্রশিক্ষণ মুলত ৩ ভাগে বিভক্ত।
১. শারীরিক প্রশিক্ষণ
২. মানসিক প্রশিক্ষণ
৩. নৈতিক প্রশিক্ষণ
শারীরিক প্রশিক্ষণ এর মুল উদ্দেশ্য ই হলো পুলিশ অফিসার দের চৌকস হিসেবে গড়ে তোলা এবং অস্ত্র চালনায় পারদর্শী করা।শারীরিক শক্তিতে বলীয়ান, সুঠাম দেহের অধিকারী পুলিশ অফিসার গড়ে তোলা শারীরিক প্রশিক্ষণ এর মূল লক্ষ্য।
মানসিক প্রশিক্ষণ মুলত ২টি উপায়ে দেয়া হয়ে থাকে। বুদ্ধিমত্তা প্রশিক্ষণ এবং মানসিকতা। মানসিক প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে তাদের দৃঢ মনোবল গড়ে তোলা হয় যাতে যে কোনো পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্য রা থাকেন অটুট এবং শক্তিশালী। বুদ্ধিমত্তা প্রশিক্ষণ এর মূল লক্ষ্য হলো পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিত বুদ্ধির উন্নতি সাধনের পাশাপাশি যে কোনো মুহূর্তে তাৎক্ষণিক কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেয়ার সক্ষমতা গড়ে তোলা।
জনগণের সেবা করা ই যে পুলিশ বাহিনীর প্রধাণ কাজ এবং অসদুপায় অবলম্বন না করে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাবার লক্ষ্যে পুলিশ বাহিনী কে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা ই বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী এর প্রধাণ লক্ষ্য।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান :
১৩ এপ্রিল ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সারদা দখল করলে ৪১ জন পুলিশ অফিসারদদের হত্যা করা হয় যারা দেশের জন্য বীরত্বের সাথে লরে প্রান হারান।
কোর্সসমুহ:
পুলিশ বাহিনী কে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। নবনিযুক্ত পুলিশ অফিসারস দের জন্য মৌলিক কোর্স। অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার ভিত্তিতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। যার ফলস্বরুপ আজকের সোয়াট, পুলিশ কমান্ড কে আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান সফলতার সাথে সম্পন্নন করতে। এ ছাড়াও, পদমর্যাদা এবং দায়িত্বের ভিত্তিতে দেয়া হয় প্রশিক্ষণ। তবে মৌলিক কোর্স সকল পুলিশ কর্মকর্তার জন্যে বাধ্যতামুলক।
মৌলিক কোর্স: এসপি, সার্জেন্ট, এস আই,কনস্টেবল।
রিফ্রেশার্স কোর্স:ইন্সপেক্টর, এস আই, সার্জেন্ট।
বিশেষ কোর্স:ইন্সপেক্টর,কনস্টবেল,প্রধান কনস্টবেল।
পুলিশ সদস্যদের সুশাসন আর মনবতার পাঠ দেয়া হয় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী তে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী এ দায়িত্ব পালন করে আসছে। পুলিশ বাহিনীর আধুনিক প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে এর আধুনিকিকরন এর দায়িত্ব নিষ্টার সাথে পালন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী।
জনগণের সেবা করা ই যে পুলিশ বাহিনীর প্রধান কাজ এবং অসদুপায় অবলম্বন না করে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাবার লক্ষ্যে পুলিশ বাহিনী কে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা ই বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী এর প্রধান লক্ষ্য।