রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল এর সূচনা হয় ঊনবিংশ শতাব্দী তে। ১৮২৮ সালে বাংলাদেশের প্রথম স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করা এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর পূর্ণ নাম- রাজশাহী গভঃ কলেজিয়েট স্কুল। প্রতিষ্ঠাকালে এর নাম ছিল ‘বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল’ যা ১৮৭৩ সালে পরিবর্তন করা হয় এবং আনুমানিক ১৮৭৫ সালে বর্তমান নাম রাখা হয়।
খরের দোচালা ঘর থেকে যাত্রা শুরু করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টি সময়ের সাথে সাথে নিজেকে করে চলেছে আধুনিকতর। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এবং শিক্ষার্থী দের কে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রস্তুত করে চলছে।

অবস্থান:

রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্রে সোনাদিঘির মোড়ে অবস্থিত রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল আয়তন প্রায় ১ একর। পদ্মার মনোরম পরিবেশ যেন শিক্ষার মান এখানে বাড়িয়ে দিয়েছে। তেমনি প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্য শিক্ষার্থীদের মনের কমলতা ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি তাদের প্রকৃতি প্রেম ও জাগ্রত করে তুলছে।

ইতিহাস ও পরিচিতি:

ব্রিটিশ আমলের তৎকালীন পূর্ব বাংলা-য় শিক্ষার প্রসারের জন্যে লর্ড বেন্টিংক এর উতসাহে প্রতিষ্ঠা লাভ করে শতবর্ষী এ পুরনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাকালীন নাম, বউলিয়া ইংলিশ স্কুল নাম আর কেউ নয়, লর্ড বেন্টিংক ই রাখেন। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এটি ই বাংলাদেশের প্রথম এবং সবথেকে প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজ অব্ধি দেশ সেরা, দেশের নাম উজ্জ্বল করা বহু বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ এ বিদ্যাপীঠ থেকে জ্ঞান আহরণ করেছেন। স্কুল এর প্রথমদিকের সময়টা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে তা আদৌ সুবিধাজনক ছিল না। ছনের দোচালা ঘরে যাত্রা শুরু করতে হয় প্রতিষ্ঠানটি কে। তৎকালীন এ বউলিয়া ইংলিশ স্কুল এর সার্বিক তত্ত্ববধানে যে অর্থ ব্যয় হতো তা তৎকালীন জমিদার ও ধনী ব্যক্তিদের সহায়তায় সংগ্রহ করা হতো। প্রতিষ্টাকালে মূলত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টি ছিল প্রাইভেট স্কুল। তবে নিজেদের সাফল্য এবং সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত এর দিকে নজরপাত করার মাধ্যমে ১৮৩৬ সালে স্কুলটি কে সরকারীকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির সরকারিকরণে ইউলিয়ম অ্যাডাম এর বেশ ভূমিকা ছিল। মাত্র ৮৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে পথযাত্রা শুরু করা গৌরবময় ঐতিহ্যের অধিকারী এ প্রতিষ্ঠান আজ হাজারো শিক্ষার্থী -র মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। সরকারিকরণ এর পূর্বে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীনে এনট্রান্স পরীক্ষায় অংশ নিতো এ বিদ্যালয় এর শিক্ষার্থী রা। ১৮৪৯ সালে স্কুলের জন্য নির্মিত পাকাভবনটি ১৮৫৭ সালে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ১৮৬২ সালে পুননির্মান করা হয় হয় ভবন। রাজা যোগেন্দ্র নারায়ণ রায় সার্বিক ব্যায়ভার বহন করেন। পরবর্তীতে ১৮৭৩ সালে স্কুল থেকে মহবিদ্যালয় এ রুপান্তরিত করা হয় একে। ১৮৭৫ সালে এ বিদ্যালয় এর শিক্ষার্থী রা প্রথমবারের মতো এন্ট্রান্স পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং ৩৮ জন ছাত্রের মাঝে ১৯ জন কৃতকার্য হয়। ১৯৩০ সালে স্কুলটিতে প্রথমবারের মতন বয় স্কাউট দল, জুনিয়র রেডক্রস, বার্ষিক ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়।

শিক্ষাব্যবস্থা:

২০০৭ সাল পর্যন্ত রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল কেবলমাত্র এস এস সি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু পরের বছর থেকে চালু করা হয় এইচ এস সি এবং ২০১০ সালে এ প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বপ্রথম এইচ এস সি পরীক্ষা দেয় শিক্ষার্থীরা। মূলত ইংরেজি শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানটির গোড়াপত্তন ঘটে। দিবা ও প্রভাতী এ দুই শিফটে ৩য় শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করা হয়।

বর্তমানে মোট ১৭০০ শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত অবস্থায় আছে যাদের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন মোট ৫৫ জন শিক্ষক। বিজ্ঞান, ব্যাবসা ও মানবিক এ ৩ শাখায় পাঠদান করা হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ১টি ছাত্রাবাস।

অবকাঠামো:

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টির মোট ভবন সংখ্যা ৭। ৫টি একাডেমিক ভবন, ১ টি ছাত্রাবাস ও ১ টি ভবন প্রধাণ শিক্ষক এর বাসভবন। এ ছাড়াও, প্রশাসনিক ও পাঠদানের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছে নতুন অত্যাধুনিক একটি বহুতল ভবন।

এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যুগে যুগে অনেক জ্ঞানী ও সফল শিক্ষার্থী এর পদধুলি পড়েছে, স্যার যদুমাথ সরকার, সুদর্শন বাবু তাদের মতোন হাজারূ শিক্ষার্থী হাজারো শিক্ষার্থী উপহার দিয়ে যাচ্ছে দেশকে যারা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে।

ইংরেজি শিক্ষা প্রসারের লক্ষে মূলতো এই ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর গোড়াপত্তন। তবে কেবলমাত্র ইংরেজি শিক্ষা প্রসারের মধ্য দিয়ে এর লক্ষ্য সীমাবদ্ধ ছিলনা।একটি অবৈতনিক প্রাইভেট স্কুল হিসেবে যখন এর যাত্রা শুরু হয় তখন থেকেই সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বাহ্যিক, আভ্যন্তরীণ, অবকাঠামোগত পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে আজকের এ রুপ লাভ করেছে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল।

Source: Link1 | Link2 | Link3 | Link4 | Link5