রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী শহরের অন্যতম এক প্রাচীন প্রতিষ্ঠান যার আলোতে সৃষ্টিলগ্ন থেকে আলোকিত হয়ে আসছে রাজশাহী। জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেবার মাধ্যমে জ্ঞানহীনতার অন্ধকার দুর করাই হলো এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রধাণ লক্ষ্য।
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি আধুনিক বিশ্বের সাথে পা মিলিয়ে চলার জন্যে, পড়াশোনার পদ্ধতিকে ডিজিটালাইজড বা আধুনিকিকরণ করার পাশাপাশি এ প্রতিষ্টান এর শিক্ষার্থী দের বাহ্যিক জ্ঞান বৃদ্ধির জন্যে ও বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠান টি।
যার ফলস্বরুপ বিগত ২ বছর যাবৎ দেশসেরার অদৃশ্য মুকুট রাজশাহী কলেজ এর সম্পদ।
পরিচিতি ও অবস্থান:
দেশসেরা এই কলেজটি ১লা এপ্রিল ১৮৭৩ সালে রাজা হরলার রায় বাহাদুর এর আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয় ।পদ্মার মনোরম পরিবেশে মনোমুগ্ধকর ক্যাম্পাস রাজশাহী কলেজ এর। সর্বমোট ৩৫ একর জায়গার উপর কলেজটি নির্মিত।
কলেজ স্থাপনা:
পদ্মার তীরে মনোরম পরিবেশে স্থাপিত এই কলেজে রয়েছে-
- স্বাস্থ্য কেন্দ্র – শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে রয়েছে এ স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
- ব্যায়ামাগার – স্বাস্থ্য ই সকল সুখের মুল এবং মাদকমুক্ত জীবন গড়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শারীরিক ফিটনেস ঠিক রাখার জন্যে এ রয়েছে এ ব্যায়ামাগার।
- খেলার মাঠ – কেবল পড়াশোনা ই নয়, খেলাধুলাতে ও নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে আসছে রাজশাহী কলেজ। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্যে আছে সুবিশাল মাঠ। বিভিন্ন জাতীয়, আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতায় রাজশাহী কলেজ এর সাফল্যের স্বাক্ষী হয়ে আছে এ খেলার মাঠ।
- প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবন – কলেজের প্রশাসনিক এবং একাডেমিক কার্য নির্বাহের জন্যে আছে পৃথক ২ টি ভবন। প্রশাসনিক ভবনে কলেজের সকল প্রশাসনিক কার্য সম্পাদন হয়ে থাকে এবং একাডেমিক ভবন হতে কলেজের সকল একাডেমিক কাজ পরিচালিত হয়।
- অধ্যক্ষের বাসভবন – রাজশাহী কলেজের সার্বিক দায়িত্ত্বভার অর্পিত এ কলেজের অধ্যক্ষের উপর। শিক্ষার্থীদের সার্বিক দেখভাল করার জন্য কলেজ ক্যাম্পাস এর ভেতরেই আছে অধ্যক্ষ এর জন্যে পৃথক বাসভবন।
- মসজিদ-মন্দির – মুসলিম ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্যে আছে পৃথক উপসানালয়। ধর্মনিরপেক্ষতার আরেকটি উদাহরণ এটি যা রাজশাহী শহর কেন, সমগ্র বাংলাদেশের ই হাতেগোনা কতিপয় কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পরিলক্ষিত।
- বোটানিক্যাল গার্ডেন – সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ এর শিক্ষার্থীদের ব্যাবহারিক পাঠদান এর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে এ উদ্যান। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ এর পাশাপাশি অনেক বিরল জাতের উদ্ভিদের ও দেখা মিলবে এ বোটানিক্যাল গার্ডেনে। এ বোটানিক্যাল গার্ডেন এর দেখভাল করার দায়িত্ব উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের উপর অর্পিত।
- নয়নাভিরাম পুকুর – ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রচন্ড তাপে জীবন যখন ওষ্ঠাগত, তখন এক ঝটকা ঠান্ডা বাতাসে শরীর-মন জুড়িয়ে দেয়ার জন্য আছে এ পুকুর। পুকুর পারের চারপাশ গাছপালা বেষ্টিত।
- টিচার্স ক্লাব – শিক্ষক দের জন্য আছে টিচার্স ক্লাব যা প্রায় সময়ে শিক্ষকদের মিলনায়তন এবং মিটিং, পার্টি এর রুপ নেয়।
- ফরেইম ল্যাংগুয়েজ ট্রেনিং সেন্টার – বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের বৈদেশিক ভাষা শিক্ষাদান করার জন্য আছে এ ল্যানগুয়েজ ক্লাব। ইংরেজি, জার্মান, ফ্রেঞ্চ, স্পানিশ, আরবি, ফার্সি এর পাশাপাশি আরো অনেক ভাষার উপর কোর্স করার ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি কলেজ এর শিক্ষার্থী বাদেও, বাইরের কেউ চাইলে ভাষা শিক্ষা নিতে পারে এখান থেকে যা কিনা কলেজটির জন্য একটি লাভজনক শিক্ষাব্যবস্থা।
- শহীদ মিনার – যে জাতি তার অতীত মনে রাখেনা, সে জাতি কখনো উন্নতি করতে পারে না। যারা আমাদেরকে আজকের এ স্বাধীন দেশ এবং মাতৃভাষা বাংলা-র জন্যে প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের শ্রদ্ধায়, শ্রদ্ধাভরে তাদের স্মরণ করার জন্যে, তাদের স্মৃতিতে রয়েছে শহীদ মিনার।
- গ্রন্থাগার – গ্রন্থাগার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর জন্য আবশ্যিক। রাজশাহী কলেজের এ কেন্দ্রীয় গনগ্রন্থাগার একটি জ্ঞানরাজ্য বা জ্ঞানসাগর। একাডেমিক এবং পাঠ্যপুস্তক এর বাইরে ও বইয়ের সুবিশাল এক সংগ্রহশালা এ গ্রন্থাগার।
শিক্ষা ব্যবস্থা:
- ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ৬ টি ভবনসহ মোট ১৬ টি ভবন।
- ছাত্রছাত্রী দের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা ছাত্রাবাস। মোট ৭ টি ছাত্রাবাস,৩টি ছাত্রীনিবাস এবং ১টি আলাদা হিন্দুছাত্রাবাস।
- দেশসেরা এই কলেজের মোট শ্রেণীকক্ষ ৯১ টি।
- মোট ২৪ হাজার শিক্ষার্থির জন্য শিক্ষক রয়েছে ২৫০ জন।
- ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবহনের জন্য ৩টি বাস
- স্বনামধন্য এই কলেজটিতে ২৪ হাজার শিক্ষার্থির জন্য ২৪ টি বিষয়ে সম্মান ও ২২ টি বিষয়ে মাস্টার্স পড়ানো হয়।
- বিজ্ঞান, ব্যবসা, কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের আওতাধীন ২৪ টি বিষয়ে অনার্স করানো হয়।
- মেয়েরা শিক্ষালাভের সুযোগ পায় ১৯৩৭ সালে।
সাফল্য:
স্বনামধন্য এই কলেজটির সাফল্য অনেক। তারমধ্যে ২০১৩-২০১৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে রাজশাহী বোর্ডএ প্রথম স্থান অধিকার করে। বিগত দুই বছরে জাতীয় কলেজগুলোর মধ্যে সেরা। এছাড়াও দেশসেরা বিভিন্ন সফল ব্যক্তিরা এই কলেজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। যেমনঃ অধ্যাপক ডঃ সুনীতি কুমার ভট্টাচার্য, ডঃ পি.ভি শাস্ত্রী, হুমায়ুন কবির,ডঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল, জ্যোতি বসু,ডঃ কুদরত-ই-খুদা,স্যার যদুনাথ সরকার,অক্ষয়কুমার মৈত্র,কবি রজনীকান্ত সেন,আনোয়ার পাশা,কাজী মোতাহার হোসেন,ঋত্বিক ঘটক,ডঃ ওয়াজেদ আলি প্রমুখ ব্যক্তিগন।
দিনবদলের সাথে সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে রাজশাহী কলেজ। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা এর সাথে পা মিলিয়ে চলতে চলতে আজ দেশ গড়ার কারিগর ছাত্রদেরকে ও প্রস্তুত করছে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে।
Source: Link1 | Link2 | Link3 | Link4 | Link5 | Link6 | Link7