ইতিহাস ও অবস্থান:
রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ, মুক্তিযুদ্ধপূর্ব প্রতিষ্ঠিত ৪ টি ক্যাডেট কলেজ এর মধ্যে সর্বশেষ এ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী প্রতিষ্ঠা লাভ করে। রাজশাহীর চারঘাট থানার সারদার মুক্তারপুর গ্রামে নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে পদ্মার তীরে সগর্বে মাথা উঁচু করে আছে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ছিল আইয়ুব ক্যাডেট কলেজ। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এর নাম দেয়া হয় মুক্তারপুর ক্যাডেট কলেজ। স্বাধীনতাত্তোর সময়ে এর নাম রাখা হয় রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ।
শিক্ষাব্যবস্থা:
প্রতিষ্ঠানটির মূলনীতি – ‘প্রভু আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দাও’ এবং মটো- রাব্বী জিদনি ইলমা। প্রতিষ্ঠানটিতে সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ইংরেজি মাধ্যমে পাঠদান করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় স্বায়ত্ত্বশাসিত এবং সামরিক বাহিনীর আওতাধীন এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় এর অধীন। এখানকার সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে নিযুক্ত করা হয় একজন অধ্যক্ষ কে যিনি লেঃ কর্ণেল অথবা সমপদ মর্যাদার সামরিক বাহিনীর জেনারেল শাখা থেকে নিযুক্ত। কখনোবা সিনিয়র শিক্ষকদের থেকেও নিয়োগ দেয়া হয়। অধ্যক্ষকে সহায়তার জন্য থাকেন একজন উপাধ্যক্ষ যিনি শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ের দেখভাল করেন এবং মেজর পদমর্যাদার একজন অ্যাডজুটান্ট যিনি অধ্যক্ষকে প্রশাসনিক কাজে সহায়তা করেন।
হাউজ:
রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের মোট হাউস ৩ টি।
১. মোহাম্মদ বিন কাশিম হাউস।
মটো- কাজই শক্তি
লোগো- নেভি ব্লু রঙের অ্যারাবিয়ান হর্স।
২. তারিক বিন জিয়াদ হাউস।
মটো- সত্যই সুন্দর
লোগো- লাল রঙের বাঘ।
৩. খালিদ বিন ওয়ালিদ হাউস।
মটো- জ্ঞানই শক্তি
লোগো- সবুজ রঙের ঈগল।
প্রত্যেক হাউজের সার্বিক তত্ত্বাবধানে একজন হাউজ মাস্টার বা সিনিয়র শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়।
প্রিফেক্ট:
হাউজ মাস্টারকে সহায়তার জন্যে দ্বাদশ শ্রেণী থেকে নিয়োগ দেয়া হয় হাউজ প্রিফেক্ট, এসিস্টেন্ট হাউজ প্রিফেক্ট, হাউজ কালচারাল প্রিফেক্ট। কলেজের দ্বাদশ শ্রেণী থেকে নিয়োগ দেয়া হয় কলেজ প্রিফেক্ট, কলেজ ডাইনিং প্রিফেক্ট, কলেজ গেমস প্রিফেক্ট, কলেজ কালচারাল প্রিফেক্ট এবং একাদশ শ্রেণী থেকে নিয়োগ দেয়া হয় একজন জুনিয়র প্রিফেক্ট যাদের কাজ হলো শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিষয়ে তাদেরকে সহায়তা করা।
স্থাপনা:
রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের একাডেমিক ব্লকের নাম- বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর একাডেমিক ব্লক। দ্বিতল একাডেমিক ভবনটিতে ক্লাসরুম, কম্পিউটার ল্যাব, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, জীববিদ্যা এর ল্যাবরেটরি, সেন্ট্রাল লেকচার হল, অনুষদ, স্টাফ লাউন্জ, উপাধ্যক্ষের অফিস, মডার্ন ল্যানগুয়েজ ল্যাব প্রভৃতি। ভবনের ঠিক সামনেই আছে মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ। বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাঠাগারটি যেন জ্ঞানরাজ্যের দুয়ার! মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া এ কলেজের ই সাবেক ক্যাডেট আব্দুল মাননাফ এর নামানুসারে মিউজিক এন্ড আর্কাইভ এর নাম দেয়া হয়েছে শহীদ ক্যাডেট আব্দুল মাননাফ মিউজিয়াম এন্ড আর্কাইভ।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান:
মুক্তিযুদ্ধে ও রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের অবদান ছিল গুরুত্ববহ। এ প্রতিষ্ঠানের ১৮ জন স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন যাদের মধ্যে ১ জন শিক্ষক, ৯ জন কর্মচারী এবং ৮ জন ক্যাডেট।
রাজশাহী শহরের এ ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি তার সূচনালগ্ন থেকে ই দেশের জন্যে ভূমিকা পালন করে আসছে এবং তারই ধারাবাহিকতা আজও বজায় রেখে যুগের সাথে পা মিলিয়ে চলছে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।