রাজশাহী শহরের অদুরে মাত্র ৫ কি: মি: পূর্বে মতিহার এর সবুজ চত্বরে অবস্থিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রায় ৩০০ হেক্টর জমির উপর সগর্বে মাথা উঁচু করে দাড়ানো রাবি(রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) ক্যাম্পাস ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দেশের অনেক উথান-পতন এর স্বাক্ষী দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠান টি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মহিমায় মহিমান্বিত।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর ইতিহাস:
মাত্র ১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আজ ৩৩ হাজার শিক্ষার্থীর জ্ঞান আহরণ কেন্দ্র। শুরুটা যদিও এতটা মসৃণ ছিল না। সেই ১৯৫০ সাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় এবং তার ফল ধরা দেয় ১৯৫৩ সালে যা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে চুড়ান্ত রুপ ধারণ করে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এ প্রতিষ্ঠানটির পাঠদান করা হতো রাজশাহী কলেজে এবং শহরের বিভিন্ন ভাড়া বাড়ির মাধ্যমে আবাসস্থল এর ব্যবস্থা করা হয় ছাত্র-ছাত্রী দের জন্য। ১৯৫৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় এর নিজস্ব ক্যাম্পাস এর কাজ শুরু হয় এবং সকল অনুষদ নিজস্ব ক্যাম্পাস এ স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয় যা ১৯৬৪ সালে এসে পূর্ণতা লাভ করে।
শিক্ষাব্যবস্থা:
একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি জ্ঞান এর পরিধি বাড়াতে রয়েছে কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার, প্রত্যেক বিভাগের জন্য ভিন্ন ভিন্ন লাইব্রেরী, ফ্যাকাল্টি লাইব্রেরী, কম্পিউটার ল্যাব, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, কম্পিউটার সেন্টার, বিজ্ঞান ওয়ার্কশপ, আই বি এস, রেখ রাসেল মডেল স্কুল
- মোট শিক্ষার্থী- ৩৩ হাজার।
- মোট অনুষদ- ৯ টি।
- মোট বিভাগ- ৫৬ টি।
রিসার্চ ইনস্টিটিউট- ৫টি।
শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থী আবাসস্থল:
রাবি ক্যাম্পাস এর উত্তর পূর্ব দিকে রয়েছে ছাত্রদের আবাসস্থল।
মোট ছাত্রহল- ১১টি।
বিশ্ববিদ্যালয় এর পশ্চিমপ্রান্তে আছে ছাত্রীদের আবাসস্থল।
মোট ছাত্রীহল- ৬ টি।
এছাড়া, ক্যাম্পাস এর পূর্বদিকে গবেষকদের জন্য রয়েছে একটি ডরমিটরি। শিক্ষক ও কর্মচারী-কর্মকর্তাদের আবাসিক এলাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে বিদ্যমান।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস:
সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি ডিবেটিং ক্লাব, ক্যারিয়ার ক্লাব, হায়ার স্টাডি ক্লাব, স্টার্ট আপ আর ইউ সহ বিবিধ সংগঠন সক্রিয় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এ। এছাড়া, দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এ। সাবাস বাংলাদেশ ভাস্কর্য এবং গোল্ডেন জুবিলি টাওয়ার রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আছে ২টি প্রশাসনিক ভবন, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, খেলার মাঠ, চিকিৎসাকেন্দ্র, ডিনস কমপ্লেক্স, সিনেট ভবন, বিজ্ঞান অনুষদ এর ৪ টি ভবন, কলা অনুষদ, ব্যাবসাশিক্ষা অনুষদ, চারুকলা অনুষদ, গনগ্রন্থাগার, টি এস সি সি, বি এন সি সি ভবন, ক্যাফেটারিয়া, ছাপখানা, রাকসু ভবন।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আছে-
শহীদ মিনার কমপ্লেক্স, স্মৃতিস্তম্ভ, গোল্ডেন জুবিলি টাওয়ার, সাবাশ বাংলাদেশ, বধ্যভূমি, বিদ্যার্ঘ, স্ফুলিঙ্গ
দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম অবস্থিত রাবি ক্যাম্পাসে
মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়:
ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহার প্রাণের বিনিময়ে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার দিকে আরেকটি পদক্ষেপ পরে। ড. জোহা তাই বাঙালি জাতির কাছে পরিচিত শহীদ জোহা নামে। স্বাধীনতাপূর্ব সে সময়ে শহীদ জোহা এর প্রাণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আইয়ুব সরকারের পতন ঘটে যা বাঙালি জাতির মাঝে অন্যরকম এক আত্মবিশ্বাস এর সৃষ্টি করে যা ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখে। এছাড়া, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বর্বরতার সাক্ষীস্বরুপ দেশের সর্ববৃহৎ গণকবর রাবি ক্যাম্পাস এ। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্ক্বালে প্রাণ হারায় বিশ্ববিদ্যালয় এর বহু শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মচারী-কর্মকর্তা।
রাজশাহীর অহংকার, রাজশাহীর গর্ব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সূচনালগ্ন থেকে আদ্যব্ধি দেশের সর্বত্র সর্ব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিবছর অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমানভাবে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে চলছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি জ্ঞান আহরণ এর প্রকৃত বা আদর্শ স্থান এ বিশ্ববিদ্যালয়।