রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে অন্যতম। নিজ বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থী দের অর্জন, সাফল্য এর মাধ্যমে বেড়ে চলছে দেশের ঐতিহ্যময়ী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর অর্জন এর ডালা। বাংলাদেশ এর স্বাধীনতার পূর্বে প্রতিষ্ঠা লাভ করা দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এটি। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজশাহী শহর এর মতিহার এ অবস্থিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। পদ্মার তীরে অপরুপ সৌন্দর্যে ভরপুর এ প্রতিষ্ঠান টি দেশের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক দুর্যোগ এর সময়ে, সামনে থেকে নের্তৃত্ব দিয়ে গেছে। তেমনি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং তার প্রাক্ক্বালে সকল আন্দোলন বিশেষত রাজশাহী কেন্দ্রিক আম্দোলন এ সামনে থেকে নের্তৃত্ব দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও এ প্রতিষ্ঠান এর শিক্ষার্থীরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর হল:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থী দের আবাসন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার জন্য রয়েছে মোট ১৭ টি হল। যার মধ্যে, ১১ টি ছাত্র নিবাস এবং ৬ টি রয়েছে ছাত্রী নিবাস।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এর পূর্ব দিকে অবস্থিত ছেলেদের হলগুলোর নাম –

  • মতিহার হল,
  • শহীদ শামসুজ্জোহা হল
  • শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল
  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল
  • জিয়াউর রহমান হল
  • শের – ই – বাংলা ফজলুল হক হল
  • মাদার বখ্শ হল
  • শহীদ হাবিবুল্লাহ হল
  • শাহ্ মখদুম হল
  • নবাব আব্দুল লতিফ হল
  • সৈয়দ আমীর আলী হল

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এর পশ্চিম পাশে অবস্থিত মেয়েদের ৬ টি হল হলো –

  • বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল
  • মুন্নুজান হল
  • বেগম খালেদা জিয়া হল
  • বেগম রোকেয়া হল
  • রহমতুন্নেসা হল
  • তাপসী রাবেয়া হল

এছাড়া ও বিশ্ববিদ্যালয় এ রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক মানের ডরমিটরি। ডরমিটরি টির নাম শহীদ মীর কাইয়্যুম হোসেন ইন্টারন্যাশনাল ডরমিটরি।

বাংলাদেশ এর মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও এর হল সমূহ:

বাংলাদেশ এর মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব আন্দোলন গুলোতে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর শিক্ষক শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা সক্রিয় ও কার্যকরী ভূমিকা নেয়। যার ফল স্বরুপ অত্যাচার এর ভয়াবহতা তীব্রতর করে পাক বাহিনী এবং এরই স্মৃতি হিসেবে দেশের সবথেকে বড় গনকবর পাওয়া যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মূলত তার আন্দোলন শুরু করে ১৯৬৯ সালে! এ সময়ে আন্দোলন তীব্রতর রুপ ধারণ করে। যার ফলে বিচলিত পাক প্রশাসন আন্দোলন নিস্তেজ করার জন্যে ড. শামসু্জ্জোহা কে গুলি করে মারে। কিন্তু ফল হয় উল্টো। আইয়ুব সরকার কে ছাড়তে হয় গদি। এখানে বাংলার ছাত্র সমাজ এর মাঝে যা টনিক হিসেবে কাজ করেছিল তা হলো তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি। স্বাধীনতা যুদ্ধে রাজশাহী শহর এর প্রায় সকল আন্দোলন এর পরিকল্পনা রণকৌশল এর স্বাক্ষী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর হলগুলো। তৎকালীন রাজশাহী শহর এর অধিকাংশ ছাত্র নেতা ও প্রবীণ নেতা রা ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র অথবা সাবেক ছাত্র। এছাড়া, এ প্রতিষ্ঠান এর বহু শিক্ষক স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ হারান। শহীদ প্রফেসর মীর আব্দুল কাইয়্যুম শহীদ প্রফেসর সুখরঞ্জন সমাদ্দার শহীদ প্রফেসর হাবিবুর রহমান ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর ভেতরে ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল প্রথম পাক সেনা রা প্রবেশ করে। এবং শামসু্জ্জোহা হলে তাদের হেডকোয়ার্টার বানায়। মুক্তিকামী মানুষদের কে এখানে নিয়ে এনে করা হতো মানবেতর অত্যাচার।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর হলগুলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ের অনেক ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আছে। নাম জানা না জানা অসংখ্য অত্যাচারিত মানুষ এর চাপা কান্নার আওয়াজ মনে হয় কান পাতলে আজ ও হলগুলোর দেয়াল এর ভেতর থেকে ভেসে আসে! স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্ক্বালে, যুদ্ধকালীন সময়ে এবং যুদ্ধ পরবর্তী সংস্কার কার্যে এ বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থী শিক্ষক এবং কর্মচারী দের অবদান এর কথা বাংলাদেশ এর ইতিহাসে বিশেষত রাজশাহী শহর এর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

Source Link1 | Link2 | Link3