রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দক্ষ চিকিৎসক গড়ে তুলতে এ প্রতিষ্ঠানটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

ইতিহাস ও পরিচিতি :

১৯৫৮ সালের ১লা জুলাই প্রতিষ্ঠা লাভ করা এই কলেজটি প্রতিষ্ঠার পিছনে মাদার বক্স এর অন্যতম অবদান রয়েছে। সর্বপ্রথম তিনিই রাজশাহী মেডিকেল কলেজের জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করেন।বাংলাদেশের দ্বিতীয় মেডিকেল কলেজ এই প্রতিষ্ঠান।

১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পূর্বে রাজশাহী তথা উত্তরবঙ্গের লোকাবহ ভারতে জলপাইগুড়ি বিভাগের আওতাধীন ছিল। ফলশ্রুতিতে মানুষজন চিকিৎসা কার্যে ভারত গমন করতো। কিন্তু, ‘৪৭ এর দেশভাগের পর বাংলাদেশ পাকিস্তানের আওতাভুক্ত হয়। যে কারণে, চিকিৎসা সেবা নিতে ভারত গমন বন্দ হয়ে যায়। এদিকে রাজশাহী তে কোনো হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ না থাকায় মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়া শুরু করে। তখন মানুষ এ অঞ্চলের জন্য মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারে। বর্তমান টিবি ক্লিনিকের নিচের তলায় ছিল বিভাগগুলো, ক্লাস হতো কো-অপারেটিভ বিল্ডিং স্কুলের শ্রেণীক্ষে। এনাটমি বিভাগের শব ব্যাবচ্ছেদ এর জন্যে তৈরী করা হয়েছিল নতুন ভবন যার পূর্ব পার্শ্বে ছিলো বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। প্রতিষ্ঠা কালীন সময়ে ১টি ছাত্রাবাস ও ১টি ছাত্রীনিবাস নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজের। ১৯৫৮ সালে পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। মাত্র ৪৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা এ কলেজ আজ হাজরো ডাক্তার তৈরীর কারিগর।

অবস্থান:

৩০ বিঘা জমির উপর অবস্থিত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত।
অবকাঠামো:

প্রায় ৯০ একর জমির উপর অবস্থিত এ হাসপাতাল এর মোট সিট ৫৩০ টি যার মধ্যে কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ এর অধীনে ১৫০ এবং সংক্রামক ব্যাধির জন্যে ২০ টি শয্যা বরাদ্দ ছিল। হাসপাতালটি মূলত কৃষি ফার্মের উপর হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয় যার আয়তন ছিল ৬০ একর। তবে, মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মোট ৯০ একর জমির উপর অবস্থিত। ১৯৯২ সালে বি ডি এস কোর্স চালু হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে শুরু হয় গ্রাজুয়েট কোর্স।

চারটি গ্যালারী আছে। ৯টি ল্যাবরেটরি আছে যা শিক্ষার্থীদের ব্যাবহারিক শিক্ষাদানের জন্য। ২ টি মিউজিয়াম আছে যা মেডিকেল সাইন্স এর অনেক তথ্য বহন করে। এনাটমি বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ২ টি ব্যবচ্ছেদ রুম। ১টি পোস্টমর্টেম রুম আছে যা লাশের ময়নাতদন্ত করার জন্যে ব্যবহৃত হয়। লাইব্রেরী ভবনে কেবল চিকিৎসাবিদ্যা সংক্রান্ত ই নয়, এর বাইরের বিভিন্ন বিষয়ে বইয়ের সমৃদ্ধ ভান্ডার রয়েছে। প্রায় ২০ হাজার বই ও জার্নাল রয়েছে এ লাইব্রেরী তে।

ভবন:

এই কলেজটির আছে বেশ কয়েকটি ভবন। নীচে এর কিছু আধুনিক ভবন এর নাম দেয়া হল-

  • ফার্মোকলজি ভবন।
  • ১০০০ আসন বিশিষ্ট অত্যাধুনিক অডিটোরিয়াম
  • গ্রন্থাগার
  • ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ ভবন
  • নার্স ট্রেইনিং সেন্টার
  • জিমনেশিয়াম
  • কলেজ ক্যান্টিন
  • ক্যাফেটেরিয়া

ছাত্রাবাসঃ

  • ছাত্রদের জন্য রয়েছে দুইটি ছাত্রাবাস ও ছাত্রীদের জন্য ৩টি ছাত্রীনিবাস।
  • ইন্টার্ন করা ছাত্র ও ছাত্রিদের জন্য আছে পৃথক পৃথক ছাত্র ও ছাত্রী নিবাস।
  • এছাড়াও স্টাফদের জন্যে রয়েছে স্টাফ কোয়াটারস।

শিক্ষাব্যবস্থা:

  • মোট অনুষদ সংখ্যা ১৮ টি। এ ১৮ টি অনুষদ এ বিভক্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা লাভ করতো।
  • স্নাতক পর্যায় এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রী দেওয়া হয়।
  • স্নাতকোত্তর পর্যায় এমফিল,এমপি এইচ,এমডি ল,ডিপ্লোমা ডিগ্রী প্রদান করা হয়
  • স্নাতক পর্যায় শিক্ষার্থি আসন সংখ্যা ২০০। তবে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে জন্য কিছুটা হলেও অগ্রাধিকার আছে। বিদেশী শিক্ষার্থিদের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দকৃত আসন রয়েছে।
  • ৪টি গ্যালারী, ৯টি ল্যাবরেটরি, ২টি মিউজিয়াম,১টি পোস্টমর্টেম রুম,১টি লাইব্রেরী রয়েছে শিক্ষার্থিদের শিক্ষার মান সুনিশ্চিত করতে।

মাত্র ৪৩ জন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ আজ রাজশাহীবাসীর আস্থার নাম।উন্নত মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিতকরার পাশাপাশি ডাক্তারি বিদ্যার আলোয় আলোকিত করছে হাজারো শিক্ষার্থিকে। বরতমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ইউনিভার্সিটি তে রূপান্তরিত হচ্ছে। যার ফলে শিক্ষার মান এর পাশাপাশি বেড়ে যাবে চিকিৎসার গুনগত মান ।

Source: Link1 | Link2 | Link3