বাংলাদেশ এর উত্তরাঞ্চলে যাতায়ত এর জন্যে বিশেষ করে রাজশাহী শহরের সাথে গোটা দেশের যোগাযোগ এর অন্যতম মাধ্যম হলো ট্রেন চলাচল। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন দাড়িয়ে আছে এ অঞ্চলের ইতিহাস এর স্বাক্ষী হয়ে। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক পরিচালিত হয় রাজশাহী রেলওয়েজ। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন এর প্রকৃত চিত্র ধরা পড়ে সাধারণত বৃহস্পতিবার রাতে এবং শনি ও রবি বার। ঘরমুখো ও ঘরত্যাগী মানুষ এর ভিড়ে ও কোলাহলে মুখরিত থাকে রেলওয়ে স্টেশন এলাকা। রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান এ রেলওয়ে স্টেশন এর। বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগীয় শহরে ঢুকতে শিরোইল বাস টার্মিনালের বিপরীত দিকে সুন্দর এবং সুউচ্চ ভবনটিই রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন এর অবকাঠামো এবং বর্ণনা:

অসাধারণ স্থাপনা শিল্পের পরিচয় মিলে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন এর কাঠামো থেকে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনটি সামনে থেকে অনেকটা পাখির মতো মনে হয়। স্টেশনের প্রধান প্রবেশ পথের আগেই সামনে রয়েছে কারসহ অন্যান্য যানবাহনের পার্কিংয়ের সুবিশাল জায়গা। প্রধান প্লাটফর্ম এর ডান পাশে আছে বিশ্রামাগার এবং টিকেট কাউন্টার। বাম পাশে আছে পুরুষ যাত্রীদের জন্য আরেকটি বিশ্রামাগার, রেলওয়ে ইনকোয়ারি, খাবার হোটেল, বইয়ের দোকান এবং ২ টি ফাস্টফুডের দোকান।সুবিশাল এ স্টেশন এলাকা ঘিরে গড়ে উঠেছে অনেক কিছু। যাত্রী সেবার কথা চিন্তা করে কিছু দোকানপাট, ক্যাফেটারিয়া সরকার কর্তৃক নির্মিত হলেও অধিকাংশ ই নির্মিত ব্যক্তি উদ্যোগে, ব্যবসা এর লক্ষ্যে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন এর মূল আকর্ষণ যদি খুঁজতে যাওয়া হয় তবে তা হয়তো রেল পথে যাতায়ত কে কেন্দ্র করে নয়, বরং স্টেশন এর সামগ্রিক কাঠামোগত সৈন্দর্য কে কেন্দ্র করে।

প্লাটফর্ম এর ভিন্নতা এনে দিয়েছে এর বিশেষায়ীত ছাদ। চিরাচরিত কনক্রিটের ছাদের পরিবর্তে একটু ভিন্নধর্মী প্লাস্টিক দিয়ে ত্রিভুজ আকৃতির কয়েকটি অংশ দিয়ে ছাদ করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের পরিষ্কার পরিছন্ন রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যে অন্যতম।মোট ৫ টি প্লাটফর্ম সহ প্রধান ভবনটি ৩ তলা বিশিষ্ট। বামপাশের দোতলাতে আছে মসজিদ আর দোতলা ও তিনতলাতে আছে একটি আবাসিক হোটেল। রেলওয়ে স্টেশন এর দুই পাশে দুইটি প্রবেশ পথ দিয়ে প্লাটফর্ম এ পবেশ করা যায়। দেশের প্রায় সকল জায়গায় যেখানে রেলপথে যাতায়ত এর সুবিধা আছে, তার প্রায় সকল স্থানে যাওয়ার জন্য ই ব্যবস্থা আছে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন এর।

প্রতিদিন রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকা, উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গে বেশ কয়েকটি ট্রেন ছেড়ে যায় এবং বেশ কয়েকটি ট্রেন এই স্টেশনে আসে। আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর মধ্যে প্রতিদিন পদ্মা এক্সপ্রেস, ধূমকেতু এক্সপ্রেস, সিল্কসিটি এক্সপ্রেস নামক তিনিটি ট্রেন ঢাকার পথে যাতায়াত করে, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ও তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেনদুটি উত্তরবঙ্গের রংপুর বিভাগে যাতায়াত করে, আর মধুমতি এক্সপ্রেস, কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ও সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস এই তিনটি ট্রেন দক্ষিণবঙ্গের খুলনা ও রাজবাড়ির গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত যাতায়াত করে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি মেইল ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে থাকে। এগুলোর মধ্যে উত্তরা এক্সপ্রেস, রাজশাহী কমিউটার, ঈশ্বরদী এক্সপ্রেস ও মহানন্দা এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো অন্যতম।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন এরসময়সূচি:

  • কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস, রাজশাহী-খুলনা
  • বরেন্দ্র এক্সপ্রেস, রাজশাহী-নীলফামারি
  • তিতুমিরএক্সপ্রেস, রাজশাহী-চিলাহাটি
  • সিল্কসিটিএক্সপ্রেস, রাজশাহী-ঢাকা
  • মধুমতি এক্সপ্রেস, রাজশাহী-গোয়ালন্দ ঘাট
  • পদ্মা এক্সপ্রেস, রাজশাহী-ঢাকা
  • সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস, রাজশাহী-খুলনা
  • ধুমকেতু এক্সপ্রেস, রাজশাহী – ঢাকা
  • রাজশাহী এক্সপ্রেস, রাজশাহী – সিরাজগঞ্জ বাজার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
  • মহানন্দা এক্সপ্রেস, রাজশাহী – খুলনা
  • উত্তরা এক্সপ্রেস, রাজশাহী – পার্বতিপুর
  • রাজশাহী কমিউটার, রাজশাহী – চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রহনপুর, ঈশ্বরদী

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন টি বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত। এর আাশেপাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে আবাসস্থল। এর ফলে, ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর হার বাড়ছে বৈকি কমছে না। আাশপাশ এর অবৈধ স্থাপনা গুলো বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ করা হলেও, পাকাপোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবে তা আবার গড়ে উঠছে। রেলওয়ে এলাকার আশপাশ এর এলাকায় চলে জমজমাট মাদক এর ব্যবসা। তবে, রেলওয়ে পুলিশ এর লোকবল কম হওয়ায় এবং প্রশাসন এর যথাযথ উদ্যোগ এর অভাবে তা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে তবে আশার বিষয় এই যে, এ বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসন সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা করছে এবং তা বাস্তবায়ন এর লক্ষ্যে ইতিমধ্যে মাঠেও নেমেছে।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন এর গুরুত্ব এবং কাঠামোগত সৌন্দর্য এর এক অভূতপূর্ব মিশেল! রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন তার ইতিহাস এবং নান্দনিকতা নিয়ে টিকে আছে এদেশের বিশেষ করে রাজশাহী বাসির মনে।

Source Link1