রাজশাহী নগরীর স্থানীয় সরকার সংস্থাই মূলত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ এর অন্যতম বৃহত্তম এ সিটি কর্পোরেশন এর সার্বিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন মেয়র। রাজশাহী শহরের সার্বিক দেখভাল করাই মূলত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর প্রধান দায়িত্ব। রাজশাহী মহানগর রাজশাহী সিটি কপোরেশনের আওতাধীন যা রাসিক নামে পরিচিত।
ইতিহাস ও পরিচিতিঃ
১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন রাজশাহী শহর এর গ্রেটার রোডে অবস্থিত। পদ্মার তীরে গড়ে ৩ঠা রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় শহর রেশম নগরী, শিফা নগরী ও নির্মল বায়ুর শহর হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত এ সিটি কর্পোরেশন পৌরসভা হিসেবে তার যাত্রা শুরু করে ১৮৭৬ সালে এবং ১৯৯১ সালে তা পূর্ণতা লাভ করে সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরিত হয়। প্রায় ৯৬ বর্গ কিঃমিঃ এলাকাজুড়ে বিস্তৃত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর সদর দপ্তর নগর ভবন এ অবস্থিত। ভুবন মোহন পার্কের টিনশেড এর দুই রুমে জন্ম নেয়া রাজশাহী পৌরসভা আজ গোটা দেশের তৃতীয় বৃহত্তম সিটি কর্পোরেশন।
রাজশাহী পৌরসভার কাযর্ক্রম পরিচালনার জন্য রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ হর গোবিন্দ সেনকে প্রথম চেয়ারম্যান করে মোট ৭ সদস্য বিশিষ্ট প্রথম টাউন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সকল সদস্যই ছিলেন সরকার মনোনীত। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, মহকুমা প্রশাসক ও মেডিক্যাল অফিসার ছিলেন পদাধিকার বলে সদস্য। পরবর্তীতে পৌর নিবার্চনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের পদ্ধতি প্রবতর্ন করা হয়। ১৮৭৬ সালে যখন পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় তখন লোক সংখ্যা ছিল মাত্র ১০ হাজার জন। পৌরসভা থাকাকালীন সময়ে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন করা হত কমিশনার এবং কমিশনারদের ভোটে নির্বাচিত করা হত মেয়র কে। নগর পরিচালনার জন্য পৌর কমিটি প্রথম গঠন করা হয় ১৯৩০ সালে। ৮টি পৌর কমিটি এর মধ্যে ছিল, গণঃপূর্ত, আলো, পানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রভৃতি পৌর কমিটি। তৎকালীন সময়ে এ কমিটিগুলোর মেয়াদ ছিল ১ বছর ও ৭টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। মাত্র ১০ হাজার জনসংখ্যা নিয়ে পৌরসভা হিসেবে যাত্রা শুরু করে ১৯৯১ সালে সিটি কর্পোরেশন এ রূপ নেয়া এ নগর এর বর্ত্তমান আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া একে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নতম সিটি কর্পোরেশন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
আভ্যন্তরীণ পরিচিতিঃ
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর আভ্যন্তরীণ অবকাঠামো সম্পর্কে কিছু বিষয় ও তথ্য নিচে উপস্থাপন করা হল –
- মোট থানা সংখ্যা ১২
- মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৩৭
- জনসংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ ছুঁই ছুঁই
- শিক্ষার হার ৬৭ শতাংশ
- রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর আওতাভুক্ত থানাগুলোর ভেতরে, বোয়ালিয়া থানার শিক্ষার হার সর্বোচ্চ ৭১ শতাংশ
- প্রথম মেয়র আব্দুল হাজী
- জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ৪০৭০ জন
- সারদা পুলিশ একাডেমী, ক্যাডেট কলেজ, সিল্ক ইন্ডাস্ট্রি সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা এ সিটি কর্পোরেশন এর অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি নিরাপত্তা ও নগরবাসীর মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি একে একটি আধুনিক নগর রাষ্ট্রে পরিণত করে যাচ্ছে
কার্যক্রমঃ
রেইল গেট বিন্দুর মোড়ের পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত নগর ভবন থেকে পরিচালিত হয় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর সার্বিক কার্যক্রম। কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে কিছু বিভাগে বা ক্যাটাগরিতে ভাগ করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে।
- নগর স্বাস্থ্য বিভাগ
- প্রকৌশল বিভাগ ( নগর পানি সরবরাহ শাখা নগর বিদ্যুৎ সরবরাহ শাখা)
- রাজস্ব বিভাগ
- কনজারভেন্সি বিভাগ
- পূর্ত বিভাগ
- সচিবালয় বিভাগ
- হিসাব বিভাগ প্রভৃতি
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর বিখ্যাত স্থাপনাঃ
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর আওতাভুক্ত কিছু পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে যা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নিচে এ সিটি কর্পোরেশন এর কিছু পর্যটন কেন্দ্রের নাম তুলে ধরা হল –
- বড়কুঠি
- বাঘা মসজিদ
- বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর
- গোবিন্দ মন্দির
- গোপাল মন্দির
- পদ্মার পাড়
- পুঠিয়া রাজবাড়ি
- শিব মন্দির প্রভৃতি
পরিশেষে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন সম্পর্কে কিছু তথ্য না দিলেই নয়। স্থানীয় জনগণের মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা, আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার এর শক্তিশালী ভিত হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছে বাংলাদেশ এর তৃতীয় বৃহত্তম এ সিটি কর্পোরেশন।