উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকেও রাজশাহী শহরে বড় আকারের কোন বাজার ছিল না। গ্রাম কেন্দ্রিক কিছু বাজার বন্দর ছিল রাজশাহী জেলার বাঘা, মীরগঞ্জ, তাহেরপুর, নাটোর, প্রেমতলী, বায়াতে। রাজশাহী শহরে স্থায়ী কোন হাট বাজার না থাকলেও অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামঝি থেকে উনবিংশ শতাব্দীর পুরোটাই পদ্মা তীরের রামপুর-বোয়ালিয়া বন্দরটি ছিল বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর। কলকাতার পরেই এর অবস্থান ছিল। রাজশাহী জেলা সহ চলন বিল এবং উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধান, পাট, কাঁচা রেশম সহ নীল ইত্যাদি এই বন্দরে জমা হতো তারপর জাহাজে সেগুলো ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ সহ মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, ইউরোপ, বসরা, মক্কা, জেদ্দার বাজার সমূহে যেতো। তবে, এখানে ক্ষুদ্র একটি বাজার ছিল যেখানে কয়েক জন ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী তরিতরকারী, মাছ, পান, সুপারী ইত্যাদি নিয়ে সকাল বেলা বসতেন এবং দুপুরের মধ্যে বিক্রি শেষে বাজার ভেঙ্গে যেত। এছাড়াও কাপড়, সাবান, তেল, লবণ, কেরোসিন বিক্রির দোকান এবং জামা-কাপড় তৈরির জন্য কিছু দর্জির দোকান বসতো।
ইংরেজ কুঠিয়ালদের ব্যবসা-বাণিজ্যের সময় এখানে তাদের একটি কলোনি ও বাজার গড়ে ওঠে যা “সাহেব গঞ্জ” নামে পরিচিত ছিল। উনিবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে মেসার্স রবার্ট ওয়াটসন কোম্পানী তাদের সকল কুঠি ও সম্পত্তি মেদিনীপুর জমিদারী কোম্পানীর নিকট বিক্রি করে দিলে, এই কোম্পানীর রামপুর বোয়ালিয়ার ম্যানেজার হন মি. অষ্টিন। ১৮৯৭ সালের প্রলংকারী ভুমিকম্পে সাহেবগঞ্জ নদীগর্ভে বিলিন হেয়ে গেলে এখানে সাহেব বাজার গড়ে ওঠে।
মি. অষ্টিন শিরোইলের জমিদার বাবু ভবানীচরনের পূর্ব পুরুষের কাছ থেকে বার্ষিক সাতশত টাকা বন্দোবস্তের মাধ্যমে বর্তমান সাহেব বাজারের পূর্বাশে একটি এক তলা ভবন নির্মাণ করেন। এরপর আলুপট্টিতে আরেকটি একতলা টিনশেড নির্মাণ করেন। এভাবেই আস্তে আস্তে সাহেব বাজার প্রতিষ্ঠা পায়। এরপর ময়মনসিংহ, পাবনা, ঢাকা, মুর্শিদাবাদ ইত্যাদি স্থান থেকে ব্যাবসায়ীরা এখানে এসে কাপড়, থালাবাসন মনোহরি সহ নানা ধরনের ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম অবস্থায় বাজারটি কোম্পানীর সাহেব বাজার নামে পরিচিতি পায়। কোম্পানী উঠে যাবার পর এটি সাহেব বাজার নামে অভিহিত হতে থাকে।
[সুত্রঃ রাজশাহীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং রাজশাহীর পরিচিতি, শ্রীকালীনাথ চৌধুরী এবং শহর রাজশাহীর আদিপর্ব, মাহবুব সিদ্দিক]