ইলা মিত্র ছিলেন একজন নারী রাজনীতিবিদ এবং সংগ্রামী কৃষক নেত্রী। সাধারণ গরীব কৃষক ও অত্যাচারিত মানুষের পাশে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন এবং তাঁদের অধিকার আদায়ে কাজ করেছেন।
ইলা মিত্রের জন্ম ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কলকাতায়। তাঁর নাম রাখা হয় ইলা সেন। বাবার নাম ছিল নগেন্দ্রনাথ সেন ও মা মনোরমা সেন। বাবা ছিলেন ব্রিটিশ শাসন আমলে একাউন্টেন্ট জেনারেল। বাবার চাকরির জন্য ইলা বেড়ে উঠেন কলকাতায়। বেথুন স্কুল এবং বেথুন কলেজ থেকে পড়ালেখা শেষ করেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি একজন ভাল খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি সর্বপ্রথম বাঙালি মেয়ে হিসেবে অলিম্পিকে যাওয়ার জন্য মনোনীত হন। যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য খেলা হয়নি। ইলা ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে সক্রিয় হন। নারী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ। এবং এরপর তিনি ছাত্র ফেডারেশন, মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি ও কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন।
১৯৪৫ সালে মালদহের রামচন্দ্রপুর হাটের জমিদার মহিমচন্দ্র মিত্রের ছোট ছেলে রমেন্দ্র মিত্রের সাথে বিয়ে হয়। এরপর থেকেই তিনি ইলা মিত্র নামে পরিচিত হন। ইলা স্বামীর সাথে রামচন্দ্রপুর চলে গেলেন। এবং সেখানে প্রথামত ঘরের ভিতরে থাকতেন। কিন্তু স্বামীর সহযোগিতায় ও স্বামীর বন্ধু আলতাফ মিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রামে একটি মেয়েদের জন্য স্কুল খুলেন। প্রথমে স্কুলে খুব কম সংখ্যক মেয়ে থাকলেও ইলা মিত্রের চেষ্টা ও আন্তরিকতায় ধীরে ধীরে মেয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
এছাড়াও তিনি গ্রামের মানুষদের সাথে মিশতেন এবং তাদের সাথে তাদের সুখ দুঃখ নিয়ে কথা বলতেন। ফলে তিনি গ্রামের মানুষের কাছে হয়ে যান ‘রানীমা’। তিনি ও তাঁর স্বামী দুজনেই জমিদার প্রথার বিরোধিতা করতেন। এবং তাঁরা আন্দোলনে জড়িয়ে পরেন।
১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত রাজশাহীর নবাবগঞ্জ অঞ্চলে যে তেভাগা আন্দোলন হয় তাঁর নেতৃত্ব দেন ইলা মিত্র। ব্রিটিশ শাসনের সময় জমিদার ও কৃষকদের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বেশ কিছু আইন এর পরিবর্তন হয়। এর মধ্যে ছিল একটি হল চিরস্থায়ি বন্দোবস্ত। এর ফলে চাষিরা তাদের জমির উপর অধিকার হারায়। এবং ধীরে ধীরে শাসকশ্রেনী তাদের উপর চরম অত্যাচার ও নিপীড়ন শুরু করে। ফলে কৃষক সমাজ ধীরে ধীরে খেপে উঠে। পঞ্চাশের মনন্তরের সময় দুর্ভিক্ষের ফলে কৃষকদের উপর অত্যাচার আরও বেড়ে যায়। ফলে তেভাগা আন্দোলনের সূচনা হয়।
ইলা মিত্র এই সময়ে এই আন্দোলনে জোরদার ভূমিকা রাখেন। তিনি রাজশাহী অঞ্চলের নাচোলে তিনি কৃষকদের সংবদ্ধ করেন। এছাড়া ১৯৪৬ সালের হিন্দু মুসলিম দাঙ্গায় ইলা মিত্র নোয়াখালীর হাসনাবাদে যেয়ে ত্রান ও পুনর্বাসন নিয়ে কাজ করেন।
তেভাগা আন্দোলন সেভাবে সফল হয়নি। বাংলা ভাগ হওয়ার পর ও ইলা মিত্র ও তাঁর স্বামী পশ্চিম বাংলায় না যেয়ে পূর্ববাংলায় থাকেন। তবে কিছুদিন পর তেভাগা আন্দোলনে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন নিহত হলে ইলা মিত্রকে জেলে নেয়া হয় ও সাজা হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানিসহ অনেক গণ্যমান্য লোক এই সাজার বিরোধিতা করেন। এরপর ১৯৫৪ সালে প্যারোলে মুক্তি পান। এরপর তিনি পশ্চিম বাংলায় ফিরে যান।
কলকাতায় ফিরে অনেক অর্থকষ্টে পরেন ইলা মিত্র। এরপর তিনি অধ্যাপনা শুরু করেন। তিনি বেশ কিছু রুশ বই অনুবাদ করেন। তাঁর মধ্যে “ হিরোশিমার মেয়ে” অনুবাদ করে সোভিয়েত ল্যান্ড নেহেরু পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও ভারত সরকার তাকে “স্বাধীনতা সংগ্রামী” হিসেবে সম্মাননা প্রদান করেন। তিনি পশ্চিম বাংলাতেও কারাগারে যান বেশ কয়েকবার। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি বেশ ব্যস্ত ভুমিকা পালন করেছিলেন। ২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্রঃ
https://en.wikipedia.org/wiki/Ila_Mitra
Thanks RajshahiAd for this valuable post.