পুঠিয়াকে বলা হয় রাজশাহীর প্রবেশ দ্বার। এই পুঠিয়া-ই প্রত্ননির্দশনের জীবন্ত জাদুঘর। রামরাবনের যুদ্ধ, কুরক্ষেত্রের যুদ্ধ, কৃষ্ণের রাসলীলা- এই সবকিছুই আপনি প্রত্যক্ষ করতে পারবেন এখানকার বিভিন্ন পূরাকীর্তিতে। এই চমৎকার পূরাকীর্তিগুলো পুঠিয়া ভ্রমনে পর্যটকদের দারুণভাবে আকর্ষণ করে।

হাজার বছরের জনপদ এই পুঠিয়া পূরাকীর্তিতে সমৃদ্ধ। এখানকার মন্দিরগুলো পর্যটকদের একটু বেশিই আকর্ষণ করে। উল্লেখযোগ্য পুঠিয়া পূরাকীর্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে পাঁচ আনি বড় শিব মন্দির, গোবিন্দ মন্দির, পাঁচ আনি রাজপ্রাসাদ, আহ্নিক মন্দির, দোলমন্দির, চারআনি রাজপ্রাসাদ, রথমন্দির, চারআনি গোবিন্দ মন্দির, চারআনি শিব মন্দির, চারআনি আহ্নিক মন্দির, চারআনি গোপাল মন্দির, কৃষ্ণপুরের শিবমন্দির ও বনদূর্গারদ মন্দির। নিচে কয়েকটি বিখ্যাত পূরাকীর্তি সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা হলো।

পাঁচ আনি বড় শিব মন্দির

এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় শিব মন্দিরের নাম হচ্ছে পাঁচ আনি বড় শিব মন্দির। এই শিব মন্দিরটি তৈরি করেন রানী ভুবনমোনদেবী। এই মন্দিরের গাত্রলিপি থেকে আমরা জানতে পারি যে এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল ৭ বছর (১২৩০বঙ্গঃ থেকে ১২৩৭বঙ্গঃ)। পঞ্চরত্ন ও পিরামিড আকারের এই মন্দিরটির উপরের অংশে চূড়া আছে ১৭৭ টি। পিতলের প্রলেপ দিয়ে বাঁধাই করে দেওয়া হয়েছে প্রত্যেকটি চূড়ার মাথা।

মন্দিরটির উচ্চতা ২৮ মিটার। বেশ কিছু চুন সুড়কির তৈরি মূর্তি রয়েছে মন্দিরটির গায়ে। এর ঠিক সম্মুখে বিরাট একটি জলঘড়ি ছিল যেটার ওজন ছিল ৯ মন। এই জলঘড়ি হতেই দণ্ড প্রহর ঘোষণা করা হতো।

পাঁচ আনি রাজপ্রাসাদ

১৮৯৫ এর দিকে এই প্রাসাদটি তৈরি করেন রানী হেমন্ত কুমার দেবী। এই রাজপ্রাসাদে রয়েছে দুইটি সিংহ দ্বার। অন্দর মহলে প্রবেশ করতে হয় পশ্চিম সিংহ দ্বার দিয়ে এবং গোবিন্দ বাড়িতে প্রবেশ করতে হয় পূর্ব সিংহ দ্বার দিয়ে। এই প্রাসাদের অধিকাংশ কক্ষ আজ ধ্বংস প্রায়। পুঠিয়ার পূরাকীর্তির অন্যতম নিদর্শন এটি।

প্রায় ৬০ একর যায়গা নিয়ে প্রাসাদটি স্থাপিত। এই প্রাসাদটিকে বেষ্টন করে আছে হুগলা, শিবচৌকি, মরাচৌকি, বাঁকাচৌকি ও গোপাল চৌকি নামক বেশ কিছু দিঘী। পাঁচআনি রাজ পরিবারের-ই সন্তান ছিলেন শচীন্দ্র নারায়ন স্যান্যাল, পূর্ব পাকিস্থানের ১ম চিফ হুইপ।

পাঁচ আনি গোবিন্দ মন্দির

গোবিন্দ মন্দিরটি পিরামিড, চৌচালা ও পঞ্চরত্ন বিশিষ্ট। এই অপরূপ প্রত্ননিদর্শনটা তৈরি করা হয়েছিল প্রেম নারায়ন স্যান্যালের আদেশে। পূর্ব-পশ্চিমে এর দৈর্ঘ্য ১৪.৩৭ মিটার। উত্তর- দক্ষিণে এর প্রস্থ ১৪.১৬ মিটার। দোতলায় ৪ কক্ষের উপরে ৪টি রত্ন তৈরি করা হয়েছে। বৃহৎ রত্নটি তৈরি করা হয়েছে মূল মন্দিরের ৪ দেয়ালের উপর।

প্রত্যেকটি রত্নই একচূড়া ও চৌচালা বিশিষ্ট। চারদিকে ৪টি পথ আছে ভেতরে প্রবেশ করার জন্য। মন্দিরের গায়ে রয়েছে অসংখ্য টেরাকোটা। রয়েছে অনেক দেবদেবীর প্রতিকৃতি, গুল্ম, লতা, ফুল ও বিভিন্ন যুদ্ধের চিত্র।

দোলমন্দির

এক রত্ন বিশিষ্ট পিরামিড আকৃতির মন্দির এটি। এই মন্দিরটি চারতলা বিশিষ্ট। উচ্চতায় এটি ১৬.৭৫ মিটার। দোলমন্দিরটি দাঁড়িয়ে আছে ৬৪টি স্তম্ভের উপর। রাজা ভূবেন্দ্র নারায়ন রায় এই মন্দিরটি তৈরি করেন ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে। দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে এটি ২১.৩৩ মিটার। চতুর্দিকেই দরজা আছে মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করার জন্য। বেশ আগে এইখানে দোল উৎসবের আয়োজন করা হতো।

আহ্নিক মন্দির

আহ্নিক মন্দিরটি বাংলো আকৃতির। এটি পাঁচ আনি প্রাসাদের ভেতরে অবস্থিত। এর উচ্চতা হচ্ছে ৬.৭০ মিটার। পূর্ব-পশ্চিমে এ মন্দিরটির প্রস্থ ৫ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে এর দৈর্ঘ্য ৭.৩০ মিটার। এ মন্দিরের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দেয়াল বিচিত্র টেরাকোটায় সজ্জিত। টেরাকোটাগুলো একটি আরেকটি থেকে আলাদা।

রথমন্দির

বড় শিব মন্দিরের ঠিক পূর্বে অবস্থিত রথমন্দির। এটি একচূড়া বিশিষ্ট দোতলা মন্দির। আনুমানিক আঠার শ’ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল এ মন্দির। রাজবংশের কুলদেবতা ৯ দিন ধরে এইখানে অবস্থান করতেন রথযাত্রার সময়। রথের সময় এখানে মিছিল গান, পালাগান ও যাত্রা হতো।

Sources Link1 | Link2 | Link3 | Link4