রাজশাহী শহরের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন পুঠিয়ার রাজবাড়ি। ইতিহাস প্রসিদ্ধ এ রাজবাড়ি রাজশাহী জেলার জমিদার বংশগুলোর মধ্যে ৩য় বৃহত্তম ও প্রাচীনতম। দুবলহাটি ও তাহিরপুর এর রাজবংশের পরেই অবস্থান পুঠিয়ার এ রাজবংশ। মূলত পুঠিয়ার এ রাজবাড়ি একসময় ছিল জমিদারবাড়ি। কিন্তু নিজেকে জমিদার হিসেবে উপযুক্ত প্রমাণ করায়, নীলাম্বর সম্রাট জাহাঙ্গীর এর কাছ থেকে রাজা উপাধি পান এবং সেই থেকে পুঠিয়া জমিদারবাড়ি হয়ে যায় পুঠিয়া রাজবাড়ি।
অবস্থান:
রাজশাহী শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার অদূরে শহরের পূর্বাংশে পুঠিয়া উপজেলায় এ রাজবাড়ি অবস্থিত। ঢাকা-রাজশাহী বিশ্বরোড এর দক্ষিণ পার্শ্বে এর অবস্থান।
ইতিহাস ও পরিচিতি:
নীলাম্বর মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর এর কাছ থেকে ‘রাজা’ উপাধি লাভ করার পরবর্তীকাল এ নীলাম্বর এর জমিদার ভবন টি পুঠিয়া রাজবাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু, ১৯৫০ সালে জমিদার প্রথা বিলীন হবার সাথে বিলুপ্ত হয় পুঠিয়া রাজবাড়ির জমিদারিও।তবে, রাজবাড়ির জমিদারি বিলুপ্ত হলেও, পুঠিয়া রাজবাড়ি নামের কোনো পরিবর্তন হয়নি। চারিদিকে পরিখা দ্বারা রাজবাড়ি ঘিরে রাখা। আগের দিনের জমিদারবাড়ি, রাজবাড়ি গুলোতে শত্রুর আক্রমণ এর কথা চিন্তা করে এবং নিজেদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে পরিখা খনন করা হতো। এ পরিখাগুলো বর্তমানে শিবসরোবর, গোবিন্দ সরোবর, গোপালচৌকি বিভিন্ন নামে পরিচিত। রাজবাড়ির মোট আয়তনের ৬ ভাগের ৫ ভাগই স্থল। ৩২ একরের মধ্যে ২৬ একর ই স্থলভাগ এবং মধ্যে ৬ একর জায়গাজুড়ে আছে শ্যামসাগর।
নিদর্শন:
- প্রাচীন কারুকার্য সমৃদ্ধ মন্দির। মন্দিরগুলোর বৈশিষ্ট্য ই হলো এ কারুকার্য। পোড়ামাটির কাজ, দেয়ালের বিভিন্ন চিত্রকর্ম দেখলে মনে হবে যেন রাজবাড়ি আজও জীবিত!
- বিশালাকার শিব মন্দির, এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম শিব মন্দির এটি।
- নয়নাভিরাম পুকুর। তৎকালীন জমিদার দের স্নান এবং মেয়েদের জলকেলি করার স্থান ছিল এ পুকুর।
- কষ্ঠিপাথর এর শিবলিঙ্গ।
- দোলমঞ্চাকারে নির্মিত চারতলা দোলমন্দির।
- স্বচ্ছ পানির দিঘি যা রাজবাড়ির সৌন্দর্য কে যেন ফুটিয়ে তোলে। এর চারপাশে গাছপালা বেষ্টিত থাকায় মনের ভেতরে অন্যরকম এক শীতল ছোঁয়া দেয়।
- বড় আহ্নিক মন্দির ও গোপাল মন্দির। পুঠিয়া রাজবাড়ির অন্যতম নিদর্শন এ আহ্নিক মন্দির ও গোপাল মন্দির।
- রাজবাড়ি এর অভ্যন্তরে আছে পোড়ামাটির কারুকার্য খচিত ঢাকা দোল মন্দির। রাজবাড়ি এর অভ্যন্তরে, বিভিন্ন পুজা অর্চনা করার নিমিত্তে এ মন্দির টি বানানো হয়। মূলত রক্ষণশীল হিন্দু পরিবারের মেয়েদের পূজা অর্চনার জন্যে বাড়ির অভ্যন্তরে মন্দির বানানো হতো। তেমনি, রাজবাড়ির মহিলাদের পুজা অর্চনার জন্যে এ মন্দির নির্মাণ করা হয়।
- লস্করপুর ডিগ্রী কলেজ – পুঠিয়া বাজার সংলগ্ন বিশাল মাঠের দক্ষিণ পার্শ্বে অবস্থিত প্রাচীন এ রাজপ্রাসাদ টি বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে লস্করপুর ডিগ্রী কলেজ হিসেবে। প্রায় সাড়ে চার কাঠা জায়গার উপর অবস্থিত এ স্থাপনা টি মূলত ৩ টি ভাগে বিভক্ত।
- কাছারিবাড়ি
- মন্দিরাঙ্গন
- অন্দরমহল
- চার আনি রাজপ্রাসাদ চার আনি রাজপ্রাসাদ এর বর্তমান অবস্থা প্রায় ভঙ্গুর। নির্মানাকালীন সময়ে প্রায় ৫ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠা করা হয় এ রাজপ্রাসাদ। এর উত্তর পার্শ্বে শ্যামসাগর, পূর্ব পার্শ্বে পাঁচ আনি রাজপ্রাসাদ এবং সম্মুখে আছে একটি তোরণ। এ রাজপ্রাসাদে আছে প্রাচীন কালের একটি ট্রেজারি ভবন।
- সর্বোপরি মুল আকর্ষণ রাণি হেমন্তকুমারী দেবীর নির্মিত এ রাজবাড়ি নিজে, এর শৈল্পিক, বাহ্যিক, অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য। নিজের শ্বাশুড়ির প্রতি ভালবাসার এক অপরুপ নিদর্শন এ রাজবাড়ি। রাণি হেমন্তকুমারী দেবী তার শ্বাশুড়ি কে উৎসর্গ করে এ রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন।
- কারুকর্যময় হাত এর কাজ রাজবাড়ির সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়াওও রয়েছে পোড়ামাটির হস্তশিল্প।
- সে সময়কার জমিদারদের ব্যবহৃত নিত্যনৈমিত্তিক ও শোখিন জিনিসপত্র।
- জমিদারদের সংগ্রহ।
- প্রাচীন ঢাকা দোলমন্দির।
- বিভিন্ন নথিপত্র।
রাজবাড়ির সৌন্দর্য:
Source: Link1 | Link2 | Link3 | Link4 | Link5 | Link6 | Link7