পাকিস্তানি শাসক তথা শোষক গোষ্ঠী যখন এদেশ এর মার্তৃভাষা হিসেবে বাংলা কে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করলো তখন বাংলার দামাল ছেলেরা এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে রুখে দাড়ায় এবং সুচনা ঘটে ভাষা আন্দোলন এর। ভাষা আন্দোলন এ অন্যতম ভূমিকা রাখে রাজশাহী অঞ্চল। ভাষা আন্দোলন এর সূত্রপাত যদিও ঢাকা তে হয়েছিল তবুও এ আন্দোলন পূর্ণতা পায় রাজশাহী বাসির সতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ফলে। ভাষা আন্দোলন এর শহীদ দের স্মরণে তৈরী করা প্রথম শহীদ মিনার এর খোঁজ পাওয়া যায় রাজশাহী অঞ্চলে যদিও তার আয়ুষ্কাল ছিলো খুবই ক্ষিণ। এ দেশের জনতা কে উষ্কে দিতে পারে মনে করে ভেঙে দেয়া হয় এ শহীদ মিনার।
পদ্মার তীরে গড়ে ওঠা এ সভ্যতার জনপদ তাদের মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনে রেখে গেছে গৌরব এর ছাপ। ভাষা আন্দোলনে রাজশাহী এবং রাজশাহী এর ভূমিকা নিয়ে আজকের এ আলোচনা।
পাকিস্তান এর রাজসভায় ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলা কে রাষ্ট্রীয় ভাষা করার দাবি জানালে, জনতা আরো ফুসলে ওঠে। ১১ মার্চ এ সারাদেশ ব্যাপি হরতাল এর ডাক দেয়া হয়। রাজশাহী শহর এর ভুবনমোহন পার্কে অনুষ্ঠিত হয় এক প্রতিবাদ সভা যেখানে ও বাংলা কে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বিকৃতি দেয়ার জন্য সভা সমাবেশ ও আন্দোলন চলে। ভাষা আন্দোলন সমগ্র দেশব্যাপী চললে ও রাজশাহী শহরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তৎকালীন সময়ে, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, ভুবনমোহন পার্ক ভাষা আন্দোলন এর ইতিহাস এর স্বাক্ষী। রাজশাহী অঞ্চল এর ভাষা আন্দোলন এর সাথে সম্পৃক্ততা এবং অবদান সম্পর্কে বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক সাইদ উদ্দিন আহমেদ এর প্রবন্ধ ” আন্দেলন ও নির্যাতন এর দশক পঞ্চাশের দশক” এ বিস্তৃত বর্ণনা পাওয়া যায়।
১৯৪৮ সালে ডাক দেয়া হরতাল ছিলো ভাষা আন্দোলন এর প্রথম পদক্ষেপ। এ হরতালে প্রথম রক্তক্ষরণ ঘটে রাজশাহী তে। হরতালে রাজশাহী কলেজ এর ছাত্ররা মিছিল নিয়ে বের হলে, হামলায় কিছু শিক্ষার্থী আহত হন। আব্দুল হাই, ডঃ মহম্মদ এনামুল হক ও ডঃ গোলাম মকসুদ হিলালী ভাষা আন্দোলন চলাকালীন সময়ে রাজশাহী কলেজ এর শিক্ষক ছিলেন এবং তাঁরা ছাত্রদের কে সর্বাত্মক সহায়তা করেন। সেদিনের সে ১১ মার্চ এর মিছিল এর সূচনা হয়েছিল ভুবনমোহন পার্ক থেকে। বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত তথা ১৯৪৮-১৯৭০ সাল পর্যন্ত রাজশাহী শহরে সংগঠিত সকল আন্দোলন এর কারিগর ছিল এ ভুবনমোহন পার্ক। ভাষা আন্দোলন চলাকালীন সময়ে রাজশাহী অঞ্চলে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে রাজশাহী কলেজ। তবে স্থানীয় জনসাধারণ এর সমর্থন এর ও প্রয়োজন থাকায়, ছাত্র জনতা ভুবন মোহন পার্ক এ একত্রিত হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেত।
সারা দেশ এর মধ্যে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত সংগঠিত ভাষা আন্দোলন এর তীব্রতা সবথেকে বেশি লক্ষিত হয় রাজশাহী অঞ্চলে আর তার ই ফলশ্রুতিতে প্রথম রক্ত ঝড়ে ও রাজশাহী তে। রাজশাহী তে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ এর পরের দিনে তা ভাঙা হলেও, মানুষ কে আত্মবিশ্বাস এর যেগান দেয়া হয়ে যায় ততক্ষণে। এ শহীদ মিনার ভাঙা নিয়ে আলাউদ্দিন আল আজাদ কবিতা ও লিখেন।
দেশের ভাষা শহীদ দের সম্মানার্থে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার এর অবস্থান রাজশাহী তে হলেও, রাজশাহী তে আজ নেই কোনো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার যা অত্যন্ত অনুতাপ এর বিষয়। রাজশাহী অঞ্চলে যত আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছিল তার সবকটির সূত্রপাত হয় ভুবন মোহন পার্কে। ১৯৫৩ সালে এখানে ভাষা শহীদ দের স্মরণার্থে তৈরী হয় শহীদ মিনার এবং ঐ বছরেই জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করা হয় ২১ শে ফেব্রুয়ারী কে।
সুতরাং পরিশেষে ভাষা আন্দোলন এবং রাজশাহী ও ভুবনমোহন পার্ক একটি অপরটির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত।
Source Link1 | Link2 | Link3 | Link4 | Link5 | Link6 | Link7