রাজশাহী শহরের কিছু স্থান রয়েছে যেগুলোর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। তেমনই একটি জায়গার নাম হলো ভূবন মোহন পার্ক। পার্কটি এখন পর্যন্ত রাজশাহীবাসীর কাছে বিশেষ ঐতিহাসিক তাৎপর্য বহন করে চলেছে।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে রাজশাহী শহরে বসবাসকারী চলনবিল অঞ্চলের জমিদার এবং পৌরসভার চেয়ারম্যান ভূবনমোহন মৈত্র শহরের মালোপাড়া এলাকায় অবস্থিত একটি পরিত্যাক্ত ডোবা ভরাট করে ছোট একটি পার্ক নির্মাণ করেন। ১৮৯৭ সালে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার রাজ্যাভিষেক হীরকজয়ন্তী/ডায়মন্ডজুবিলী উপলক্ষ্যে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণের হিড়িক পড়ে যায়। তখন নব নির্মিত এই পার্কটির নামকরন করা হয় জুবিলী পার্ক। সময়ের বিবর্তনে সাধারণ মানুষ একে যুগীর বাগান বলতে শুরু করে। বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত প্রায় সকল রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ভূবন মোহন পার্ককে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। এদেশের প্রথম রাজনৈতিক আন্দোলন অর্থাৎ বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রায় সমূদয় কর্মকাণ্ড ভূবনমোহন পার্ককে কেন্দ্র করে ঘটেছে। ভাষা আন্দোলনের প্রায় সবকয়টি সভা এই পার্কেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। উনসত্তরের ১১ দফা আন্দোলনের পুরো মিছিল মিটিং এখান থেকেই আবর্তিত হয়েছে । যতদূর জানা যায় ভাষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই শুরু হয় ভূবনমোহন পার্কের পরিচিতি এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র। সভা কিংবা মিছিলের আয়োজনকারীরা লিফলেট, পোস্টারে, মাইকে প্রচারের সময় “ভূবনমোহন পার্ক” কথাটি উল্লেখ করতেন। এভাবেই ১৯০০ সালে দ্বায়িত্বে থাকা রামপুর বোয়ালিয়া পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ভূবনমোহন মৈত্র কতৃর্ক প্রতিষ্ঠিত “জুবিলী পার্ক” কালের বিবর্তনে যুগীর বাগান এবং শেষে ভূবনমোহন পার্ক হিসাবে আখ্যায়িত হয়।
[সূত্রঃ শহর রাজশাহীর আদিপর্ব, মাহবুব সিদ্দিকী]