নদীমার্তৃক দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বয়ে চলা হাজারো বহমান নদ নদী গুলো একেকটি বিশেষ কারণে তাৎপর্যপূর্ন তবে একটি জায়গায় প্রতিটি নদীর মাঝে রয়েছে মিল আর তা হলো ইতিহাস ও ঐতিহ্য। একেকটি এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী আবহমানকাল ধরে ঐ অঞ্চল এর সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস, গর্ব, লজ্জ্বা এর স্বাক্ষী হয়ে থাকে। তেমনি রাজশাহী এর বুক ভেদ করে বয়ে চলা পদ্মা নদী এ অঞ্চল এর অতীত থেকে আজ পর্যন্ত সকল ইতিহাসের স্বাক্ষী এবং এ অঞ্চল এর সংস্কৃতির সাথে, এলাকার মানুষের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশ এর অন্যতম প্রধাণ এ নদী যেমন এ অঞ্চল কে করেছে সমৃদ্ধ তেমনি কখনো কখনো তা বয়ে এনেছে জনমানব জীবনে ঘোর অন্ধকার।

শিক্ষানগরী নামে খ্যাত রাজশাহী শহর এর সাহিত্য ও সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ব্রিটিশ উপনিবেশ, স্বাধীনতা যুদ্ধ, রাজশাহী এর প্রতিটি গর্ব ও কলঙ্ক এর স্বাক্ষী হয়ে থাকা এ পদ্মা নদী বয়ে যাওয়ায় রাজশাহী এর মাটি হয়েছে উর্বর এবং এ অঞ্চল কে করেছে চাষবাষ এর জন্য উপযোগী। তবে, বহমান আশির্বাদ এর পাশাপাশি এ নদী আমাদের দিয়ে গেছে অভিষাপ ও। নদী ভাঙন সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ ভয়াল রুপ ধারণ করে মানুষ এর সর্বনাশ করে গেছে। পদ্মার কড়াল গ্রাসে অনেক মানুষ হয়েছে সর্বহারা ও নিঃস্ব। নদী ভাঙনে আজও অনেক মানুষ হয়ে যাচ্ছে সর্বসান্ত।

পদ্মা নদীর সৃষ্টি:

পদ্মা মূলত একটি শাখা নদী। হিমালয় থেকে সৃষ্টি হওয়া গঙ্গা নদী এর প্রধাণ শাখা নদী হলো এ পদ্মা নদী। বাংলাদেশ এর দ্বিতীয় বৃহত্তম এ নদী চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রবেশ করে যমুনার সাথে মিলিত হয়ে শেষ হয়েছে এবং চাঁদপুর এ মেঘনা এর সাথে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। পদ্মা নদী তার আরেক নাম কীর্তিনাশা। এ নামকরণ এর পেছনে রয়েছে ইতিহাস। রাজা রাজবল্লভ এর কীর্তি পদ্মা বুকে পড়ে বিনাশ হওয়ায় এর নাম দেয়া হয় কীর্তিনাশা।

পদ্মা নদী সম্পর্কে কিছু সাধারণ তথ্য:

  • পদ্মা নদী বয়ে চলেছে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, চাঁদপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর উপর দিয়ে
  • বহমান এ নদী প্রায় ৩৬৬ কি মি দৈর্ঘ্য
  • এ নদীর নদীটির গড় গভীরতা ২৯৫ মিটার হলেও সর্বোচ্চ গভীরতা ৪৭৯ মিটার
  • উত্তর হতে দক্ষিণ দিকে বহমান এ নদী মূলত শাখা নদী
  • পদ্মা এর শাখা ও উপনদী গুলো প্রায় পুরো দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত
  • ফারাক্কা বাধ পদ্মা এর মুখে বসানো হয়
  • বাংলাদেশে নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১২১ কিঃ মিঃ

বই পুস্তকে পদ্মা:

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কালের সব কালজয়ী লেখক এবং সাহিত্যিকরা পদ্মা নদী কে নিয়ে রচনা করে গেছেন অসংখ্য সাহিত্য। যার মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য মামিক বন্দোপাধ্যায় এর অমর রচনা, “পদ্মা নদীর মাঝি”। তাছাড়ো অনেক গান রচনা করা হয়েছে পদ্মা কে কেন্দ্র করে। এসব গান এর দেখা মিলবে পদ্মার বুক দাপিয়ে বেড়ানো নৌকাগুলোর মাঝি দের মুখে মুখে। পদ্মার সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েই রচনা হয়েছে এসকল সাহিত্য।

পদ্মা নদী যেন এ দেশের মানুষের জন্য বয়ে চলা এক জীবন্ত ও চলন্ত আশির্বাদ। এর বুক চিরে চলে হাজারো জলজান যা নৌ পথে সমগ্র দেশকে করেছে একত্রিত। এছাড়া, একে কেন্দ্র করে বহু মানুষের জীবিকা নির্বাহ চলে। পদ্মার ইঁলিশ মাছ এর কথা জানে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবেনা।

আবহমান কাল ধরে রাজশাহী অঞ্চল এর বুক চিড়ে চলা পদ্মা কখনো মানুষের জন্য আশির্বাদ আবার কখনো মানুষের জন্য অভিষাপ হিসেবে আবির্ভাব করেছে। রাজশাহী এর অতীত সব ইতিহাস এর পাশাপাশি বর্তমানের ও স্বাক্ষী এ পদ্মা তেমনিভাবে ভবিষ্যতে ও রাজশাহীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক বাহক ও কে জানে হয়তো অনেক অজানা এর স্বাক্ষী হয়ে থাকবে এ নদী।