রাজশাহীর পদ্মাগর্ভে ইংরেজি অক্ষর T-এর আদলে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি বাঁধই টি-বাঁধ। পদ্মা পাড়ের টি-বাঁধটি উম্নুক্ত বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে ব্যাপক পরিচিত এবং জনপ্রিয়। বাঁধটি জন্মলগ্ন থেকে সকলর নজর কাড়ে। এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে কে না চায়?

বাঁধটিতে রয়েছে মনুষ্য সৃষ্ট একটি নয়নাভিরাম বাগান। রাজশাহী পুলিশ লাইন্সের তত্তাবোধনে বাগানটি গড়ে তোলা হয়েছে। বাঁধটির উত্তর পাশে বাড়তি আকর্ষণের জন্য ইট-সিমেন্টের বক ও বিভিন্ন জীব জন্তুর ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে বাগানের মধ্যে। এই বাগানটি শুধু রাজশাহীবাসীর নয়, পর্যটকদেরও প্রধান আকর্ষণ। শিক্ষার্থীরও পড়াশুনার ফাঁকে এখানে এসে বাঁধের সৌন্দর্যে মনকে সতেজ ও প্রফুল্ল করে নিয়ে যায়। প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থীর পদভারে পিষ্ট হয় বাঁধটি। আনন্দ, হই-হট্টোগোল করে পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ান দর্শনার্থীরা। আর কাছ থেকে উপভোগ করেন পদ্মার প্রমত্ত রূপ, আবার কখনো বা পদ্মার শান্ত, স্নিগ্ধ, মমতাময়ী রূপ।

টি-বাঁধের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ নারিকেল গাছের বাগান ও বাঁধের পাশের ফুল বাগান। এই নারিকেল বাগান ও ফুলের বাগান নগরীর নদীর তীরে আর কোথও নেই। সারি সারি নারিকেল গাছ বাঁধের সৌন্দর্য অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে যেন সামনে নারিকেল দ্বীপ। দর্শনার্থীর অনেক সময় মজা করে একে নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও ডেকে থাকেন। বাঁধের সারিবদ্ধ নারিকেল গাছ গুলোর ছবি উঠিয়ে দেখলে মনে হবে- এ যেন সত্যিই নারিকেল জিঞ্জিরা। ফুলের বাগানে রয়েছে ঋতু ভিত্তিক ফুলের গাছ। এজন্য এই বাঁধ ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই বাঁধের  নারিকেল গাছগুলো আজ হুমকির মুখে। পদ্মা গর্ভে বিলীন হতে চলেছে বাঁধের অপরূপ সৌন্দর্যের আধার নারিকেল বাগান এবং ফুলের বাগান। সর্বনাশা পদ্মা নারিকেল গাছের সারি থেকে মাত্র কয়েক ফুট দূরত্বে। বড় ধরণের একটা বন্যা হলে ক্ষুধার্ত পদ্মা গ্রাস করে নিতে পারে বাঁধের অপরূপ সৌন্দর্য সহ সমগ্র বাঁধটাকে।

বর্তমানে নদী ভাঙনে হুমকির মুখে টি-বাঁধ। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাঁধটি রক্ষার ব্যাপরে বাস্তব এবং সুদূর প্রসারি কোন পদক্ষেপ নাই। প্রথম দিকে বাঁধটিতে গাছ লাগাতে নিরুৎসাহীত করত পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাদের যুক্তি ছিল- বাঁধটি পলিমাটি দিয়ে গঠিত যা, যে কোন সময় নদীগর্ভ বিলীন হতে পারে। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডর এক জন উর্ধতন কর্ম কর্তার মতে টি-বাঁধ টি ভেঙে গেলেও শহর রক্ষা বাঁধের কোন ক্ষতি হবে না।

ভরা বর্ষা মৌসুমে পদ্মায় যখন পানি বাড়তে থাকে এবং ভারত ফারাক্কার সব গেট খুলে দেয় তখন হুমকির মুখে পড়ে টি-বাঁধ। মাঝে মাঝে অবস্থা এমনি বেগতিক হয় যে বালুর বস্তা বা জিও ব্যাগ ফেলে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। বর্ষা মৌসুমে একই রকম চিত্র দেখা যয়। কিন্তু এটি কোন স্থায়ী সমাধান নয়। ২০১৬ সালর বর্ষাকালে টি-বাঁধের উত্তরাংশে ভাঙন দেখা গিয়েছিল এবং এর কিছু অংশ দেবে গিয়েছিল। সে ভাঙন এখনো অব্যাহত আছে। পদ্মার পানি এভাবে বাড়তে থাকলে বাঁধটির ধ্বংস অনিবার্য এবং রাজশাহীর নগরীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।

বাঁধ ভাঙার কারণঃ

. অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন।

. বর্ষা মৌসুমে যেখানে বালির বস্তা বা জিও ব্যাগ ফেলানো হয়, শুষ্ক মৌসুমে সেখান থেকেই বালি তোলা হয়।

.  বালির বস্তা বা জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা বিজ্ঞান সম্মত নয়।

.  বাঁধ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না  নেওয়া

.  পর্যাপ্ত আর্থিক বরাদ্দ না পাওয়া।

এই বাঁধটি রক্ষার  জন্য যথাযথ কতৃপক্ষকে বিজ্ঞান সন্মত উপায়ে চিন্তা ভাবনা করতে হবে। বাঁধ রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সরকারি বরাদ্দের প্রয়োজন।