রাজশাহীর সিল্ক নামটি বললে সবার প্রথমে মাথায় আসে রাজশাহীর সিল্ক শাড়ি। এথেকেই এর জনপ্রিয়তা সম্পর্কে আন্দাজ করা যায়। একসময় রাজশাহী সিল্ক এর সুনাম কেবল দেশের গন্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বাইরের দেশগুলোতেও বেশ কদর ছিল রাজশাহী সিল্ক এর। মাঝের হারানো জৌলুশ আবারো ফিরে পেতে শুরু করেছে এই সিল্ক শাড়ি। সূক্ষ তুঁত রেশম দিয়ে তৈরি রাজশাহীর সিল্ক শাড়ির জনপ্রিয়তা সিল্কের শাড়িগুলোর মধ্যে সর্বাধিক। মসলিন কাপড়ের বর্ণনা সম্পর্কে একটি দেশীয় কথিত প্রবাদ আছে যে, “মসলিনের শাড়ি ভাজ করে ম্যাচের বাক্সের ভেতর রাখা যায়!” এ থেকে সূক্ষতা, হাতের কাজ ও জনপ্রিয়তা বোঝা যায়।

বাংলাদেশে সিল্ক শাড়ির ইতিহাসঃ

ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বাংলায় সিল্কের বিস্তার শুরু হয় যখন এর নাম ছিল “বাংলা সিল্ক”, “গঙ্গা সিল্ক”। ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি সরকার রাজশাহীতে সিল্কের উৎপাদন শুরু করে। “রাজশাহী সিল্ক ফ্যাক্টরি” নামে প্রথম রাষ্ট্র মালিকানাধীন সিল্ক ফ্যাক্টরি ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তীতে এ ফ্যাক্টরিটি হস্তান্তর করা হয় বাংলাদেশ সরকারের কাছে। কিন্তু, বিভিন্ন সময়ে লস এর কারনে এর প্রডাকশন বার্ষিক ৩০০ টন থেকে কমিয়ে ৫০ টন করা হয়। ২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকার ফ্যাক্টরিটি বন্ধ ঘোষণা করেন।

উন্নয়নে ভূমিকা:

এক সময়ে রাজশাহী শহরের ঐতিহ্যবাহী এ সিল্কের শাড়ির জৌলুশ হাড়িয়ে যাওয়া শুরু করেছিল তবে ক্রমবর্ধমান সচেতনতা এবং সহায়ক ভূমিকার পাশাপাশি এ ক্ষাতে মনোযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে, রাজশাহীর সিল্কের শাড়ি ফিরে পেতে পারে তার জৌলুশ। কিছু পদক্ষেপ যেমন- ১. শাড়ি চোরাচালান বন্ধ করা, ২. শাড়ির রপ্তানি তে শুল্ক কমানো, ৩. এ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ৪. সর্বোপরি জনগণ কে উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে, উন্নতি সাধন করা সম্ভব এ শিল্প এর।

রাজশাহীর সিল্ক শাড়ির প্রকারভেদঃ

বর্তমানে এপার বাংলার পাশাপাশি ওপার বাংলার অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের নারীদের কাছেও অতি জনপ্রিয় এক নাম রাজশাহী সিল্ক শাড়ি। বাজারের প্রতিযোগিতায় যেন হারিয়ে না যাওয়া লাগে সে জন্যে সিল্ক শাড়ির মধ্যে আসছে নতুনত্ব, বাহারি ডিজাইন, হাতের কাজ প্রভৃতি। বাংলাদেশের বাজারে বিদ্যমান এমনই কিছু সিল্ক শাড়ি হলো- জামদানি, বলাকা, মুসলিন এমব্রয়ডারি, র-কাতান, ধুপিয়ান, মুসলিন ব্রাশো, স্বর্ণ কাতান, ঝলক কাতান, মুসলিন শিপন, এনডি প্রভৃতি। এসকল বাহারি সিল্ক শাড়ি বিভিন্ন দামে পাওয়া যায়। হাজার থেকে শুরু করে লক্ষাধিক টাকার সিল্ক শাড়িও পাওয়া যায়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় রাজশাহী সিল্ক একটি অলাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়। তবে, বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে হারানো জৌলুশ ফিরে পাচ্ছে রাজশাহীর সিল্ক শাড়ি।

মূল্য:

সকল শ্রেণীর ক্রেতার কথা মাথায় রেখে, রাজশাহী এর সিল্কের শাড়ি বানানো হয়। আর তাই তো এর দাম কম বেশি সকলের হাতের নাগালে। হাজার থেকে শুরু করে লক্ষাধিক টাকার রাজশাহীর সিল্ক শাড়ি পাওয়া যায়। তবে, মাঝারি দেমের যেমন ৪০০০-৭০০০ টাকার মধ্যে ক্রয়লভ্য সিল্কের শাড়ির চাহিদা তুলনামূলক ভাবে বেশি।

রাজশাহীর সিল্ক শাড়ির জনপ্রিয়তার কারণঃ

রেশম এর মধ্যে সর্বাধিক সূক্ষ তুঁত রেশম দিয়ে তৈরী যার ফলে সহজে নোংরা হয় না, সহজে পরিষ্কার করা যায়, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবান্ধব, সিল্ক শাড়ির সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য, নমনীয়তা, ব্যবহারের আরামদায়কতা প্রভৃতি কারণে রাজশাহীর সিল্ক শাড়ি তার ভোক্তাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। রাজশাহীর সিল্ক শাড়ির চাহিদা থাকে পুরো বছড়জুড়ে। বিভিন্ন উৎসব, অনুষ্ঠান, ইদ, পূজা-অর্চনায় বাঙালি মেয়েদের প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকে রাজশাহীর সিল্ক শাড়ি। সেই ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সিল্ক শাড়ি, বিশেষত রাজশাহীর সিল্ক শাড়ি তার ঐতিহ্য ও জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে এর প্রসার আরো বাড়ানো সম্ভব। বিদেশে রপ্তানি বাড়িয়ে একে বানানো যেতে পারে দেশের বৈদেশিক অর্থ উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম। রাজশাহী অঞ্চলের গৌরব ও ঐতিহ্য এর অন্যতম অংশ হলো রাজশাহীর সিল্ক শাড়ি।

Source Link1 | Link2 | Link3 |