রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীনতম এবং উত্তরবঙ্গ এর একমাত্র প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। মাত্র ১২২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থীর জ্ঞান আহরণ কেন্দ্র।

অবস্থানঃ

রাজশাহী শহর থেকে মাত্র ৩ কিঃমিঃ দূরে পদ্মার পাড়ে মনোরম পরিবেশে এবং নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে অবস্থিত রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কাটাখালী নর্দার্ন বিদ্যুতকেন্দ্র এর পূর্বাংশে ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম পার্শ্বে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান।

ইতিহাস ও পরিচিতিঃ

রাজশাহী প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় নামে ১৯৬৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয় এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৮৬ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজী, রাজশাহী। ২০০৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে এবং রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নাম ধারণ করে যার সংক্ষিপ্ত নাম হয় রুয়েট (RUET)। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রকৌশল বিভাগের অধীন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে কেবলমাত্র ৩টি বিষয়ে সম্মান ডিগ্রী প্রদান করত এ প্রতিষ্ঠানটি। -যন্ত্রকৌশল -তড়িতকৌশল -পুরকৌশল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ায়, এ প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক কারিকুলাম ঠিক করত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে, শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে দেখা দিত নানা জটিলতা। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার পর এ জটিলতার সমাধান হয়। তখন রাজশাহী প্রকৌশল মহাবিদ্যালয়টি বিআইটি, রাজশাহী নামে আত্মপ্রকাশ করে। তবে, এর পরেও নীতি নির্ধারণের কিছু ত্রুটির কারণে ব্যাহত হচ্ছিল প্রশাসনিক কার্যক্রম। ২০০৩ সালে রুয়েট কে পূর্ণাঙ্গ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পর এসকল সমস্যার সমাধান হয়।

শিক্ষাব্যবস্থাঃ

৪টি পূর্ণাঙ্গ অনুষদের অধীনে মোট ১৮টি বিভাগে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত আছে যাদের দেখভাল করার জন্য নিযুক্ত আছেন প্রায় ২০০ শিক্ষক। প্রতিটি বিভাগের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আসন সংখ্যা। সবথেকে বেশি ১২০টি আসন রয়েছে। -নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ -তড়িত এবং ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগ -কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ -যন্ত্রকৌশল বিভাগ যন্ত্রকৌশল অনুষদ, তড়িত এবং কম্পিউটার কৌশল অনুষদ, পুরকৌশল অনুষদ ও অ্যাপ্লাইড সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ এ চারটি অনুষদের অধিভুক্ত বিভাগগুলো। ইংরেজি মাধ্যমে পাঠদান করা হয়।

অবকাঠামোঃ
মোট ১৫২ একর জায়গার উপর সগর্বে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে রুয়েট ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এর অবকাঠামো বা ভবনগুলো-

  • প্রশাসনিক ভবন
  • ক্যাফেটেরিয়া
  • কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার
  • সেন্ট্রাল অডিটোরিয়াম
  • কেন্দ্রীয় মসজিদ
  • কমনরুম
  • মনুমেন্ট
  • প্রতিটি বিভাগের জন্য পৃথক পৃথক ভবন
  • ব্যায়ামাগার
  • প্রতিটি অনুষদের জন্য রয়েছে পৃথক পৃথক গবেষণাগার
  • চিকিৎসা কেন্দ্র
  • কম্পিউটার সেন্টার
  • ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট

ছাত্রাবাসঃ

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে রয়েছে মোট ৭টি হল, যার মধ্যে ১টি ছাত্রীনিবাস। ছাত্র হলের মোট আসন ১৮০০ এবং ছাত্রী হলের মোট আসন ২০০ যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম। এ সমস্যা দূর করার জন্য নতুন ২টি হল নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর কর্মচারীদের জন্য রয়েছে স্টাফ কোয়ার্টার ও শিক্ষকদের জন্য রয়েছে প্রফেসর’স কোয়ার্টার।

শিক্ষাসহায়ক কার্যক্রমঃ

বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে চিলার পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তির সাথে আমাদেরকে পরিচয় করানোর জন্য প্রয়োজন নিত্য নতুন প্রযুক্তিগত আবিষ্কার। আর এজন্যে চাই শিক্ষার্থীদের সঠিক মানসিক বিকাশ। আর একাধিক মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রম।

  • অ্যান্ড্রয়েড ডেভেলপার রুয়েট
  • অ্যাস্ট্রনমিকাল সোসাইটি
  • রুয়েট প্রোগ্রামিং অ্যাসোসিয়েশন
  • টেলিকমিউনিকেশন ক্লাব
  • ব্লগারস এসোসিয়েশন ও ডিবেটিং ক্লাব
  • ধ্রুবক
  • রোবোটিক সোসাইটি সহ আরো বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রমের ভূমিকা নিয়ে আসছে।

মুক্তিযুদ্ধে অবদানঃ

বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শহিদুল ইসলাম ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা লেঃ সেলিম মোঃ কামরুল হাসান ছিলেন রুয়েট এর ব্যাচ-৬৭ এর শিক্ষার্থী।

সাফল্যঃ

রুয়েট এভেঞ্জারস (AVENGERS) ও রুয়েট গ্রাফিনয (GRAFFINZ) ” তেলবান্ধব যানবাহন নকশা (Fuel efficient vehicle design) ” প্রতিযোগিতায় রুয়েট মেকানিকাল টিম ‘ECORUN Bangladesh 2013’ এওয়ার্ড জিতে।

রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তার সূচনালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত সাফল্যের সাথে এগিয়ে চলছে। প্রতিবছর এ প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়া প্রকৌশলীরা দেশের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

Source Link1 | Link2