রাজশাহী জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান হল শহীদ এ . এইচ.এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রিয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। শহীদ এ .এইচ.এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রিয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা রাজশাহী মহানগর বাসীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এটি রাজশাহী শহরের অন্যতম উদ্যান এবং শিশুপার্ক হিসেবেও ব্যাবহৃত হয়। প্রসঙ্গত, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাতীয় নেতার অন্যতম শহীদ এ.এইচ.এম কামরুজ্জামানের প্রচেষ্টায় ১৯৭২ সালে এর প্রতিষ্ঠা হয়। প্রায় ৩২ দশমিক ৭৬ একর জমির ওপর উদ্যানটি স্থাপিত হয়।
ইতিহাস:
রাজশাহী শহরের রেসকোর্স ছিল পদ্মার পাড়ে। এখন এই রেসকোর্স ময়দান রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। রেস ও টমটম বন্ধ হওয়ার পর রাজশাহীর রেসকোর্স ময়দান দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল। শহরবাসীর বিনোদনের আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলার জন্য তৎকালীন মন্ত্রী শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান ও জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ এখানে উদ্যান নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৯৭২ সালে এর কার্যক্রম শুরু হয়। প্রায় ৩৩ একর ভূমিতে নির্মিত উদ্যানটিকে জেলা পরিষদের নিকট থেকে ১৯৯৬ সালের ২৬ নভেম্বর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন গ্রহণ করে। তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী জিল্লুর রহমান মেয়র মো মিজানুর রহমান মিনুর নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন।
এই উদ্যান এর সামগ্রিক কাজ শুরু হয় ১৯৭৫-৭৬ সালে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক শফিউর রহমান ও নজরুল ইসলামের সময়ে কিছু দুষ্প্রাপ্য বৃক্ষরোপণ ও উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালানো হয়। তখন বাগানে ২টি বানর ছিল। ১৯৭৫ সালের শেষ ভাগে আব্দুর রহিম খানের প্রচেষ্টায় পটুয়াখালির জেলা প্রশাসক আব্দুস সাত্তারের নিকট থেকে ১ জোড়া হরিণ এনে রাখা হয়েছিল। তবে তখন চিড়িয়াখানা স্থাপনের চিন্তা-ভাবনা ছিল না। হরিণ দুটির বংশ বিস্তার হয়ে ১৮টিতে দাঁড়ালে রক্ষণা-বেক্ষণের অসুবিধার সৃষ্টি হয়। যার কারণে ১২টি হরিণ ঢাকা চিড়িয়াখানায় দান করা হয়। সে সময় সুষ্ঠু পরিচর্যার অভাবে বাগানের মূল্যবান বৃক্ষের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছিল।
১৯৮৩ সালে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুস সালাম একটি বড় ড্রামে এক জোড়া ঘড়িয়ালের বাচ্চা ছেড়ে দিয়ে চিড়িয়াখানার পত্তন করেন। ১৯৮৬ সালের জুন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা উন্নয়নে ব্যয় হয় ৩৪ লক্ষ ৮১ হাজার ৪৯২ টাকা। ১৯৯৬ সালের ২৬ নভেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী জিল্লুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর কাছে প্রকল্পটি হস্তান্তর করেন।
অবস্থান:
রাজশাহীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট থেকে পশ্চিম দিকে আনুমানিক ৩ কি.মি. দূরত্বে রাজপাড়া এলাকায় পর্যটন মোটেলের পশ্চিমে এবং রাজশাহী বিভাগিয় কমিশনারের কার্যালয় ও রাজশাহী পুলিশ লাইন এর পূর্ব দিকে অবস্থিত। প্রধান রাস্তার উত্তর পার্শ্বের রাস্তা থেকে পার্কটি দেখা যায়। জিরো পয়েন্ট থেকে রিক্সা বা অটোতে যাওয়া যায়।
বর্তমান পরিস্থিতি:
কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা গেছে প্রায় প্রাণীশূণ্য হয়ে পড়েছে রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানাটি। সবুজে ঘেরা এই চিড়িয়াখানা এক সময় রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, ভালুক, চিতা ও মেছোবাঘ, বিশালাকৃতির অজগর ও গোখরা সাপ, ময়ূর, কুমিরসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখির কলকাকলিতে সরব ছিল।
কিন্তু যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ও রক্ষকদের সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সেসব প্রাণী একের পর এক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।
কিন্তু খুব শীঘ্রই পাল্টে যাচ্ছে রাজশাহীর একমাত্র ও অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র শহীদ এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। ঢেলে সাজানো হচ্ছে উদ্যান ও চিড়িয়াখানার বিভিন্ন অংশ। আসছে নতুন পশুপাখি।
কিন্তু খুব শীঘ্রই পাল্টে যাচ্ছে রাজশাহীর একমাত্র ও অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র শহীদ এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। ঢেলে সাজানো হচ্ছে উদ্যান ও চিড়িয়াখানার বিভিন্ন অংশ। আসছে নতুন পশুপাখি।
চিড়িয়াখানাটি এমনভাবে সাজানো হবে যেন সেখানকার পশুপাখিগুলোও বন ও প্রকৃতির ছোঁয়া পায়। অপরদিকে চলতি শীত মৌসুমে পিকনিক স্পটের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাও বৃদ্ধি করা হবে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নির্মিত এ উদ্যান রাজশাহী শহরের স্বাধীনতা পরবর্তী সময় এর অনেক ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। রাজশাহীবাসী দের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র এ পার্ক সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আধুনিকায়ন হয়ে আসছে। যথাপযুক্ত ব্যাবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ও সম্প্রসারণ এর পাশাপাশি দায়িত্বশীল কতৃপক্ষের কিছুটা সুদৃষ্টির মাধ্যমে এ পার্ক এর উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে জনগণের দৃষ্টি ব্যাপক পরিমাণে আকর্ষণ করা সম্ভব।