নতুন কিছু সৃষ্টি বা আবিষ্কার মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। তাই তো মানব সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকে অদ্যাবধি অজানাকে জানার জন্য নিরন্তর ছুটে চলা। চাকা আবিষ্কার আদিম মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতির চাকা আধুনিক সভ্যতার দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল। এরপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! রাইট ভাতৃদ্বয় আবিষ্কার করে ফেললেন বিমান। যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় এলো বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এখন মানুষ শব্দের বেগ, আলোর বেগে যাতায়াতের চেষ্টা করছে। স্বপ্ন দেখে মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার। বহিবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও দ্রুত যাতায়াতের মাধ্যম হিসাবে আকাশ পথকেই বেছে নিয়েছে। যার ফলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, যশোর, সৈয়দপুর (নীলফামারী), বরিশাল ও কক্সবাজারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিমানবন্দর। এসব বিমানবন্দর দিয়ে আকাশপথে আন্তজাতিক ও আভ্যন্তরীণ রুটে সরকারি ও বেসরকারি বিমান চলাচল করে। রাজশাহীতে অবস্থিত শাহ মখদুম বিমানবন্দরটি আভ্যন্তরীণ বিমান বন্দর।

সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ

রাজশাহী শহরের অদূরে ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শাহ মখদুম বিমানবন্দর। শুরু থেকেই এটি আভ্যন্তরীণ বিমান রুট হিসাবে কাজ করত। প্রথমে সপ্তাহে তিন দিন বাংলাদেশ বিমান শুধু মাত্র ঢাকাতে ফ্লাইট পরিচালনা করত। ২০০৬ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত এটি লাভজনক ছিল। যথাযথ কতৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে অল্প কিছু দিনের মধ্যে যাত্রীরা মুখ ফিরিয়ে নেয়। ২০০৭ সালের ২০ শে ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ বিমান এই বিমানবন্দর থেকে বিমানের সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়। তখন একটি বেসরকারি বিমান সংস্থা এই বিমানবন্দর থেকে তাদের বিমান পরিসেবা চালু করে। এভাবে পেরিয়ে যায় আটটি বছর। অবশেষে ২০১৫ সালের ০৬ এপ্রিল বাংলাদেশ বিমান পুনরায় শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে আভ্যন্তরীণ রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু করে।

এক নজরেঃ

সমুদ্র সমতল থেকে বিমান বন্দর টি ২০ মিটার বা ৬৪ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। একটি মাত্র রানওয়ে নিয়ে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে শাহ মখদুম বিমানবন্দর। এই বিমান বন্দরের রানওয়ের দৈঘ্য ১,৮২৯ মিটার বা ৬০০০ ফুট এবং প্রস্থ ৩০ মিটার বা ৯৮ ফুট।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাঃ

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃপক্ষ এই বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রন করে। বিমান বাংলাদেশ ও বিমান সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ঢাকা ও সৈয়দপুরে আভ্যন্তরীণ রুটে নিয়মিত বিমান চলাচল করে।

দুর্ঘটনাঃ

সূচনা থেকে এই বিমানবন্দরটি দুইবার দুর্ঘটনা কবলিত হয়। ২০১৩ সলের ২৫ শে এপ্রিল বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমির দুই সিটের একটি চেস্না-১৫২ উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ বিমান শাহ মখদুম বিমান বন্দরে জরুরী অবতরনের সময় উল্টিয়ে যায়। প্রশিক্ষক ও শিক্ষানবিশ বিমান চালক সামান্য আহত হন। মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে ০১ এপ্রিল, ২০১৫। প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় শিক্ষানবিশ বিমান চালক তামান্না নিহত হন এবং প্রশিক্ষক সাঈদ কামাল গুরুতর আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায় বিমানটি রানওয়েতে টেকঅফ করার সময় ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তামান্না এবং সাঈদ কামাল গুরুতর আহত হন।

নিরাপত্তা ব্যবস্থাঃ

বর্তমানে শাহ মখদুম বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ২৬ শে অক্টোবর সোমবার দুপুরের আগপর্যন্ত বিমান বন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করতেন সিভিল এভিয়েশান কর্তৃপক্ষ। ২৬ শে অক্টোবর দুপুরের পরের থেকে তাদের সাথে যোগ দেন পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যবৃন্দ। এ ব্যাপারে বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃপক্ষের বক্তব্য, বিমানবন্দরের যেকোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে নেওয়া হয়েছে এই বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বর্তমানে এখানে সংযোজিত হয়েছে অত্যাধুনিক অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা।

প্রতিনিয়ত শাহ মখদুম বিমানবন্দরের সাথে যুক্ত হচ্ছে উন্নত ও আধুনিক ব্যবস্থাদি, যা বিমানবন্দরকে করে তুলেছে অত্যাধুনিক। যাত্রী সেবার মান অতীতের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিমানবন্দরটির উন্নয়নের জন্য যথাযথ কতৃপক্ষের আরও আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন।

Source Link1 | Link2 | Link3