উত্তরাঞ্চলের বিশেষ করে রাজশাহী জেলার ভোলাহাট, গোমস্তাপুর, শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রভৃতি এলাকার অতি জনপ্রিয় লোক-সঙ্গীত হলো গম্ভীরা গান। নাচ-গান এবং নানা-নাতীর কৌতুকাভিনয়ের মাধ্যমে গম্ভীরা গানে সমসাময়িক উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী পর্যালোচনা করা হয় এবং ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপের মাধ্যমে দোষ-ত্রুটি তুলে ধরতে দেখা যায়। এ গানের মৃল উদ্দেশ্য হলো, সত্য ভাষণ বা গুমর ফাঁস করা।
গম্বীরা গানের ওস্তাদ বা প্রবর্তনকারী শেখ সফিউর রহমান সুফি মাস্টার নামে খ্যাত। তিনি ১৮৮৭ বা ১৮৮৮ সালে ভারতের মালাদহ জেলায় ফুলবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ বিসারত। শৈশবকালে তিনি পিতৃহারা এবং মাতৃহারা হয়ে লেখা পড়া বেশি দূর করতে পারেননি। ১৯০৭ সালে ডাক বিভাগে প্যাকারের চাকরীর মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় এবং গানের জন্য শেষ পর্যন্ত খুলনায় পোষ্ট মাস্টার পদে উন্নীত হন। ১৯৫১ সালে তিনি অবসর গ্রহন করেন।
“সুফি মাস্টার” শুধু গান রচনাই করতেন না, তিনি তাঁর সুর নাচের ছন্দ ভঙ্গিও অন্যদের শেখাতেন। এক সময় গম্ভীরা গান এত জনপ্রিয়তা লাভ করে যে, ব্রিটিশ সরকার শঙ্কিত হয়ে ওঠে এবং তাঁকে নজরবন্দী করে রাখেন। গান শুনে মুগ্ধ হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৭ বা ১৯১৮ খ্রীষ্টাব্দে সুফি মাষ্টারকে একটা সোনার মেডেল উপহার দিয়েছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি রাজশাহী থেকে মাদার বখশ সাহিত্য-সংস্কৃতি পুরস্কার লাভ করেন। রাজশাহীর “উত্তরা সাহিত্য মজলিস” থেকেও গম্ভীরা গানের উদ্ভাবক হিসেবে সুফি মাস্টার পুরুস্কৃত হন ১৯৭৭ সালে। ভম্ভীরা গানের বিকাশ সাধনে চাঁপাই নবাবগঞ্জের কুতুবুল আলম এবং রকিবু্দ্দিনের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। বর্তমান যুগেও গম্ভীরা গানের ব্যাতিক্রমধর্মী উপস্থাপনার জন্য গম্ভীরা তার জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে।

[সূত্রঃ রাজশাহীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং রাজশাহীর পরিচিতি, শ্রী কালীনাথ চৌধুরী]